এই সময়ের মতো করে রবীন্দ্রনাথকে ছড়িয়ে দিতে হবে—অণিমা রায়

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৪তম প্রয়াণদিবস উপলক্ষে আজ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান অণিমা রায়। এ উপলক্ষে ‘প্রথম আলো’ তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে।

আজকের অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গে অণিমা জানান, বাংলাভিশনের ‘তুমি রবে নীরবে’ আয়োজনে চারটি গান গাইবেন তিনি, আবৃত্তি করবেন ফেরদৌস বাপ্পী। একই আয়োজনে থাকবে তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘সুরবিহার’-এর পরিবেশনাও। এছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন, এটিএন বাংলা, চ্যানেল আই ও একুশে টিভির বিশেষ আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন তিনি।

‘সুরবিহার’-এর বর্তমান অবস্থার কথা বলতে গিয়ে অণিমা জানান, প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত সংগীতচর্চা করে যাচ্ছে। বসন্ত উৎসব থেকে শুরু করে বর্ষা উৎসব—সব অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে তারা। সংগীতচর্চা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাদের উৎসাহ থেমে নেই।

এই প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথ কতটা পৌঁছাচ্ছেন—এই প্রশ্নে অণিমা বলেন, তরুণেরা রবীন্দ্রসংগীত ভালোবাসে। অনেক পরিবারেই রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি রয়েছে। তবে এখনকার ছেলেমেয়েরা এত ব্যস্ত আর দায়িত্বে ভারাক্রান্ত যে ধ্যানস্থ হয়ে গান শোনার মতো সময়ই তারা পাচ্ছে না। অথচ রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে সময় দিতে হয়, মনোযোগ দিতে হয়। তাই শিশুদের মানবিক ও দেশপ্রেমিক করে গড়ে তুলতে হলে তাদের রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও লালনের সঙ্গে পরিচয় করানো জরুরি।

তিনি বলেন, “এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জন্য এই সময়ের মতো করেই রবীন্দ্রনাথকে উপস্থাপন করতে হবে।” আধুনিক শ্রোতাদের মন ছুঁতে হলে গান উপস্থাপনে পরিমিতভাবে আধুনিকতার সংযোজন প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, হৃদয় দিয়ে গাওয়া, স্বরলিপি মেনে উপস্থাপিত গান, যার সুরে আধুনিকতার ছোঁয়া রয়েছে—সেই গান যে প্রজন্মই হোক না কেন, গ্রহণ করবেই।

ফিউশন নিয়ে সমালোচনার প্রসঙ্গে অণিমা বলেন, “রবীন্দ্রনাথ নিজেই ছিলেন আধুনিক। তাঁর গানে লোকসঙ্গীত, শাস্ত্রীয়, এমনকি পাশ্চাত্য সুরের ছোঁয়া রয়েছে। তাই ফিউশন করা যেতেই পারে, তবে সেখানে থাকতে হবে পরিমিতবোধ ও দায়িত্বশীলতা। তাঁকে বুঝে, সম্মান রেখে উপস্থাপন করাটাই জরুরি।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমার গান যতটা মানুষের কাছে পৌঁছায়, তার চেয়ে অনেক বেশি পৌঁছে যায় আধুনিক গানের শিল্পীদের গান। তাই আমি তাদেরও অনুপ্রাণিত করি রবীন্দ্রসংগীত গাইতে। তবে সুরের বিকৃতি নয়, সঙ্গীতায়োজনে আধুনিকায়ন হোক—সেই প্রত্যাশাই করি।

সবশেষে, তিনি সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী পালন সংক্রান্ত নির্দেশনার মাধ্যমে সরকার গুরুত্বপূর্ণ একটি সাংস্কৃতিক দায়িত্ব পালন করেছে। এখন নাগরিক হিসেবে আমাদের কাজ, রবীন্দ্রনাথের মানবিক বোধ আর সৌন্দর্যচেতনা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া—এই সময়ের ভাষায়, এই সময়ের হৃদয়ে।