নব্বইয়ের দশকের মফস্বল শহরের নিস্তরঙ্গ জীবনের ওপর নির্মিত সিনেমা ‘উড়াল’ দর্শককে ফিরিয়ে নিয়ে যায় এক হারানো সময়ে যখন হাতে মুঠোফোন ছিল না, ঘরে ঘরে ছিল না ইন্টারনেট কিংবা বিদ্যুৎ। এই সিনেমায় ধরা পড়েছে তিন তরুণ বন্ধুর গল্প, প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা, মফস্বলের বাস্তবতা এবং সমাজের ন্যায্য বিচারহীনতার যন্ত্রণা।
একনজরে সিনেমাটি:
চলচ্চিত্র: উড়াল
পরিচালনা: জোবায়দুর রহমান
গল্প: সম্রাট প্রামাণিক
অভিনয়: মাহাফুজ মুন্না, সোহেল তৌফিক, শান্ত চন্দ্র সূত্রধর, কাব্যকথা, করবী দাশ, কে এম আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ
চিত্রগ্রহণ: ইবাদত আলীম
সম্পাদনা: আশিকুর রহমান
সংগীত: খৈয়াম সানু সন্ধি
গল্পের পটভূমি:
সিনেমার শুরুতেই আমরা দেখি ভোম্বল (বাচ্চু), একজন স্বাস্থ্যবান তরুণ, ভাঙাচোরা সাইকেলে গ্রামের মেঠো পথে চলছে। কুমকুম নামের স্কুলপড়ুয়া কিশোরীর প্রেমে পড়া, দুই বন্ধু রঞ্জু ও মতির সঙ্গে আড্ডা সব মিলে নির্মাতা গড়ে তুলেছেন এক অতি পরিচিত কিন্তু দুর্লভ আবহ।
রঞ্জু মহাজনের আড়তে কাজ করে, আর মতি একজন পত্রিকা বিক্রেতা যাকে সবাই ‘বিবিসি’ নামে ডাকে। এই তিন বন্ধুর বন্ধন, ট্রেন-উড়োজাহাজের সঙ্গে সাইকেল দৌড়ানোর দৃশ্য এবং ছোট ছোট খুঁটিনাটি মুহূর্ত এক সময় নিয়ে যায় এক ট্র্যাজিক মোড়ে যেখানে কুমকুম হারিয়ে যায়।
গল্পের দ্বিতীয়ার্ধে আসে বিশ্বাসভঙ্গ, নিঃসঙ্গতা আর বন্ধুত্বের ভাঙন। সিনেমার একপর্যায়ে উঠে আসে সেই অনন্ত প্রশ্ন “কেন বয়স বাড়লে ছোটবেলার বন্ধু হারিয়ে যায়?”
অভিনয় ও নির্মাণশৈলী:
তিন তরুণের অভিনয় ছিল সাবলীল, রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা ও সংলাপ নিখুঁত। নবাগত কুমকুমের অভিনয়ও প্রশংসনীয়। অনেক চরিত্র বাস্তবের সঙ্গে দারুণভাবে মিশে গেছে, বিশেষ করে কুমকুমের মা চরিত্রে তার বাস্তব মা এবং বাচ্চুর সহকারী ঘেটু চরিত্রের শিশুশিল্পী।
তাহলে, পয়সা উশুল হবে কি?
যাঁরা নব্বইয়ের দশকে মফস্বল শহরে বড় হয়েছেন, গ্রামের জীবন, স্কুলের রোমান্টিক মুহূর্ত বা বন্ধুত্বের টানাপোড়েনের স্মৃতি আজও বুকে ধরে রাখেন তাঁদের জন্য ‘উড়াল’ শুধু একটি সিনেমা নয়, এক নস্টালজিয়ার ভাণ্ডার। তাঁদের জন্য নিঃসন্দেহে পয়সা উশুল।
তবে যাঁদের সেই স্মৃতি নেই, গ্রাম-জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন, কিংবা যারা শুধুই অ্যাকশন-থ্রিলারপ্রেমী, তাদের কাছে হয়তো সিনেমাটি ধীর গতির বা অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ মনে হতে পারে।
তবুও, গ্রামীণ বাংলাদেশ ও অতীতের শেকড়কে ভালোবাসেন যাঁরা তাঁদের জন্য ‘উড়াল’ একটি আবশ্যিক অভিজ্ঞতা।