আজ কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আশা ভোসলের ৯২তম জন্মদিন। অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। তার সুরের জাদুতে অসংখ্য শ্রোতা মুগ্ধ হয়েছেন। তবে সুরকার আর ডি বর্মনের সঙ্গে তার জুটি ছিল ভারতীয় সংগীতে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। বিশেষ করে 'তিসরি মঞ্জিল' ছবির 'আজা আজা ম্যায় হুঁ পেয়ার তেরা' গানটির পেছনের গল্পটি আজও যেন অবিশ্বাস্য ঠেকে। আশা ভোসলের জন্মদিনে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবলম্বনে সেই গানের কিছু অজানা তথ্য তুলে ধরা হলো।
পঞ্চমের অডিশন, শাম্মি কাপুরের সম্মতি
১৯৮৪ সালের এক সাক্ষাৎকারে আর ডি বর্মন জানিয়েছিলেন, 'তিসরি মঞ্জিল' ছবির সুরকার হিসেবে গীতিকার মজরুহ সুলতানপুরী তার নাম প্রস্তাব করেন। ছবিতে প্রথমে দেব আনন্দ নায়ক হিসেবে থাকলেও মতবিরোধের কারণে পরে শাম্মি কাপুর আসেন। এতে আর ডি বর্মন বিপাকে পড়েন, কারণ শাম্মির পছন্দের সুরকার ছিলেন শংকর-জয়কিশন। শাম্মি তার কাছে গান শুনতে চান, আর ডি যখন 'দেওয়ানা মুঝসা নাহি' শোনান, তখন শাম্মি হতাশ হয়ে বলেন, "এ কেমন গান!" নাসির হুসেন ভেবেছিলেন ছবিটি বুঝি বন্ধই হয়ে যাবে। কিন্তু এরপর যখন আর ডি 'আজা আজা ম্যায় হুঁ পেয়ার তেরা' বাজালেন, শাম্মি সঙ্গে সঙ্গে উঠে নাচতে শুরু করেন। এভাবেই এই কালজয়ী গানটির সুর করার সুযোগ পান আর ডি বর্মন।
আশার কঠিন রিহার্সাল ও ড্রাইভারের দুশ্চিন্তা
গানটি শুনে আশা ভোসলে অবাক হন, কারণ 'আহ আহ আজা, আহ আহ আজা' অংশটির জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসে অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ দরকার ছিল। গানটিকে নিখুঁত করতে তিনি টানা আট দিন অনুশীলন করেন। মজার বিষয় হলো, এই রিহার্সালের সময় তার ড্রাইভার একদিন মনে করেন, আশা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন, "ম্যাডাম, হাসপাতাল যাবেন?" কারণ গানের অনুশীলনের সময় আশার অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস দেখে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। পরে অবশ্য জানতে পারেন, সেটি ছিল বিখ্যাত 'আজা আজা' গানের রিহার্সাল।
লতা মঙ্গেশকরের উৎসাহ ও আর ডি বর্মনের ভালোবাসা
গান নিয়ে এতটাই চিন্তিত ছিলেন আশা যে তিনি তার বোন লতা মঙ্গেশকরের কাছে পরামর্শ নিতে যান। লতা তাকে বলেছিলেন, "তুমি ভুলে যাচ্ছ যে তুমি প্রথমে মঙ্গেশকর, পরে ভোসলে। গান গাও, ভালোই হবে।" অন্যদিকে, আর ডি বর্মনও আশার ওপর এতটাই নির্ভরশীল ছিলেন যে তিনি বলতেন, "তুমি যদি আমার গান না গাও, আমি গান বানানো বন্ধ করে দেব, তখন ভজন-কীর্তন করব।" কারণ, তিনি জানতেন আশার কণ্ঠের জাদু ছাড়া তার সুর পূর্ণতা পাবে না।
এই দুই কিংবদন্তি শিল্পী ১৯৮০ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং আর ডি বর্মনের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা একসাথে পথ চলেছেন।