আইএমডিবির জনপ্রিয় সেলিব্রিটি তালিকায় শীর্ষে থাকা এবং সিরিজ ‘সার্চ: নয়না দ্য মার্ডার কেস’-এর সাফল্য। সব মিলিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত শ্রদ্ধা দাস। তাঁর কথায়, এত বছর ধরে ছয়টি ভাষায় কাজ করার পর এই স্বীকৃতি, প্রশংসা আর ভালোবাসা সত্যিই উপভোগ করছেন।
সৃজনশীলতার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও সফল ‘নয়না’। কঙ্কণা সেন শর্মার মতো অভিনেত্রী ও রোহন সিপ্পির মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাকে শ্রদ্ধা আলাদা আনন্দের বলে মনে করেন। সিরিজে তাঁর চরিত্র নিয়ে দর্শকদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তাঁকে আরও আত্মবিশ্বাসী করেছে।
সাফল্য উদ্যাপন প্রসঙ্গে হালকা হাসিতে শ্রদ্ধা বলেন, সিরিজ মুক্তির পর থেকেই কাজ আর ইন্টারভিউয়ের চাপ বেড়েছে, তাই উদ্যাপনের সুযোগই মেলেনি। তবে সবকিছুর জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।
অভিনয়ে আসার পথে পারিবারিক সমর্থনের কথাও উঠে আসে। শ্রদ্ধা জানান, তাঁর বাবা ভীষণ “কুল” হলেও পরিবারের ইচ্ছা ছিল তিনি পড়াশোনায় মন দিন। ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কথা ভাবা হলেও তিনি পড়েছেন গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা নিয়ে, পাশাপাশি শিখেছেন গান।
এক সময় একটি মিউজিক অ্যালবামের ফটোশুট দেখে কিংবদন্তি দেব আনন্দ তাঁকে ছবিতে নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন, যদিও সেই ছবি আর হয়নি। স্মৃতিচারণায় শ্রদ্ধা বলেন, দেব আনন্দের মুখে জিনাত আমানের সঙ্গে তুলনা শোনা তাঁর জীবনের অন্যতম বড় প্রাপ্তি।
বলিউড ও দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির তুলনায় শ্রদ্ধার পর্যবেক্ষণ স্পষ্ট। তাঁর মতে, দক্ষিণের দর্শক বেশি আবেগপ্রবণ ও অনুগত, সেখানে কাকভোরে হলভর্তি দর্শক স্বাভাবিক। বলিউডে তা তুলনামূলক কম, তাই প্যান-ইন্ডিয়া ছবির প্রয়োজন বাড়ছে। শৃঙ্খলার দিক থেকেও দক্ষিণ এগিয়ে, যদিও ‘নয়না’ সিরিজের ইউনিট পুরোপুরি শৃঙ্খলা মেনেই কাজ করেছে।
দক্ষিণী সুপারস্টার আল্লু অর্জুনের সঙ্গে ‘আর্য ২’-এ কাজের অভিজ্ঞতাকে শ্রদ্ধা জীবনের অন্যতম সুখস্মৃতি বলে মনে করেন। তাঁর ভাষায়, আল্লু ভীষণ মজার ও তীক্ষ্ণবুদ্ধির মানুষ, তখন থেকেই স্টাইল ও ফ্যাশন নিয়ে সচেতন ছিলেন। আজ তাঁর সাফল্য দেখে শ্রদ্ধা সত্যিই খুশি।
ইচ্ছার তালিকায় রয়েছেন শাহরুখ খান, আবার সুযোগ পেলে আল্লু অর্জুনও। শাড়ির প্রতি আলাদা টান থাকায় সঞ্জয় লীলা বানসালির ছবিতে শাড়ি পরে অভিনয় করাও তাঁর স্বপ্ন। রাজ-ডিকের মতো পরিচালকের সঙ্গেও কাজ করতে চান তিনি।
দীর্ঘ অনিশ্চয়তার পর এখন নিজেকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে করছেন শ্রদ্ধা। ১৫-২০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে পছন্দের চরিত্রের জন্য। অনেক সময় ছোট চরিত্রে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে, রাজনীতি আর তারকা-সন্তানের কারণে কাজও হারিয়েছেন। আগে এসব কষ্ট দিত, এখন আর নয়। তাঁর কথায়, কিছুই থালায় সাজিয়ে পাননি, সবই এসেছে পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ে।
‘নয়না’ সিরিজের জন্য তিনি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ, কারণ এখানে তাঁর কোনো দৃশ্য বা সংলাপ বাদ পড়েনি, যা অতীতে বহুবার হয়েছে।
বাংলা সিনেমা দেখা নিয়ে তিনি বলেন, টানা শুটিংয়ের কারণে সময় পাননি। তবে বাঙালিয়ানা ধরে রাখার চেষ্টা করেন, বাঙালি খাবার, মিষ্টি আর চিংড়ি মাছ তাঁর দুর্বলতা।
আগামী দিনে শ্রদ্ধাকে দেখা যাবে জয়দীপ আহলাওয়াতের সঙ্গে একটি গ্ল্যামারাস চরিত্রে এবং মনোজ বাজপেয়ীর সঙ্গে আরেকটি শক্তিশালী নারী চরিত্রে। তাঁর মতে, কঙ্কণার পর জয়দীপ ও মনোজের সঙ্গে কাজ করা স্বপ্নপূরণের মতো।
অভিনয়জীবনের আক্ষেপ প্রসঙ্গে একটু থেমে তিনি বলেন, ব্যস্ততার কারণে কিছু কাজ করেছেন যেগুলো করতে চাননি। ভাবলে খারাপ লাগে। তবে এখনকার আনন্দ সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় তৃপ্তি, এখন নির্মাতারা তাঁকে অডিশন ছাড়াই চরিত্র অফার করছেন।