গল্পটা সিনেমার চেয়েও বেশি রোমাঞ্চকর। হাতে করাত-হাতুড়ি নিয়ে ঘর মেরামতের কথা ভাবছিলেন যে মেয়েটি, আজ তার হাতেই উঠতে পারে বিশ্ব চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ‘অস্কার’। নরওয়ের অভিনেত্রী Renate Reinsve-এর জীবন যেন এক লহমায় বদলে যাওয়া এক জাদুকরী উপাখ্যান।

২০২১ সালের এক সকাল। কান চলচ্চিত্র উৎসবে রেনাতের প্রথম সিনেমা The Worst Person in the World-এর প্রিমিয়ার হয়েছে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নামকরা পত্রিকা ‘The Guardian’-এ নিজের প্রশংসা পড়ে রেনাতে এতটাই নার্ভাস হয়ে যান যে, সোজা বাথরুমে গিয়ে বমি করে ফেলেন! তিনি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে, বিশ্বখ্যাত সমালোকরা তাকে তার প্রজন্মের সেরা অভিনেত্রী বলছেন। সেই উৎসব থেকেই সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে বিশ্বমঞ্চে নিজের জানান দেন তিনি।

অথচ এই সাফল্যের কয়েক দিন আগেও রেনাতে ছিলেন হতাশ। নরওয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বড় হওয়া এই মেয়েটি নিজেকে সবসময় সব জায়গায় ‘বেমানান’ ভাবতেন। পারিবারিক ব্যবসায় মন বসেনি, স্কাউট থেকেও বের করে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি থিয়েটারে দশ বছর কাজ করার পরও যখন মনের মতো সিনেমার প্রস্তাব আসছিল না, তিনি ঠিক করেছিলেন অভিনয় ছেড়ে কাঠমিস্ত্রি হবেন। একটি পুরনো বাড়ি সংস্কার করতে গিয়ে কাঠকাটার কাজে আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি।

ঠিক যখন তিনি ইন্ডাস্ট্রি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তখনই ত্রিয়ের নামের এক নির্মাতা তাকে ফোন করেন ‘জুলি’ চরিত্রের জন্য। আর তাতেই কেল্লাফতে! বর্তমানে তার নতুন ছবি Sentimental Value হলিউডে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। কান উৎসবে ১৯ মিনিট দাঁড়িয়ে করতালি (Standing Ovation) পেয়েছে এই ছবি, যা উৎসবের ইতিহাসে তৃতীয় দীর্ঘতম। এখন গোল্ডেন গ্লোব থেকে অস্কার,সবখানেই শোনা যাচ্ছে এই ‘প্রাক্তন কাঠমিস্ত্রি’-র নাম।

Renate Reinsve-এর এই গল্প আমাদের শেখায় যে, সাফল্যের চাবিকাঠি কখন আপনার দরজায় কড়া নাড়বে তা কেউ জানে না। শুধু নিজের কাজটা মন দিয়ে করে যেতে হয়,তা সে অভিনয় হোক বা কাঠমিস্ত্রি!