বাংলাদেশে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের শুরুটা হয়েছিল শিল্পী ও নির্মাতাদের জন্য এক নতুন সৃজনশীল মাধ্যম হিসেবে, যেখানে গল্প বলার ক্ষেত্রে কোনো সীমাবদ্ধতা ছিল না। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই স্বাধীনতা অনেক সময় অতিরঞ্জিত ও অতিরিক্ত রগরগে দৃশ্যের জন্ম দিচ্ছে, যা দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে অশ্লীলতা হিসেবে গণ্য হচ্ছে। সম্প্রতি, শাহরিয়ার নাজিম জয় পরিচালিত 'পাপ কাহিনি' সিরিজটি নতুন করে এই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

সেন্সরশিপ বনাম শৈল্পিক স্বাধীনতা

অনেক নির্মাতা দাবি করেন যে গল্পের প্রয়োজনেই এসব দৃশ্য দেখানো হয়। অন্যদিকে, দর্শকদের অভিযোগ, এসব কনটেন্ট পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা যায় না। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সেন্সরশিপের দাবি উঠলেও নির্মাতারা মনে করেন, এতে ওয়েব সিরিজ এবং টিভি নাটকের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। অতীতেও 'বুমেরাং', 'সদরঘাটের টাইগার' এবং 'আগস্ট ১৪'-এর মতো কনটেন্ট অশ্লীলতার জন্য সমালোচিত হয়েছিল। সমালোচনার মুখে প্রথম দুটি কনটেন্ট অ্যাপ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং 'আগস্ট ১৪'-এর কিছু দৃশ্য সংশোধন করা হয়।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও সমাধানের পথ

বাংলাদেশে যখন ওটিটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক চলছে, তখন ভারতে সম্প্রতি ২৫টি প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করা হয়েছে অশ্লীল কনটেন্টের জন্য। এর মধ্যে 'এএলটি বালাজি' এবং 'উল্লু'-এর মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মও রয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এসব কনটেন্টকে 'পর্নোগ্রাফিক প্রকৃতির' বলে আখ্যা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সম্পূর্ণ সেন্সরশিপ যেমন সম্ভব নয়, তেমনি সম্পূর্ণ স্বাধীনতাও ঝুঁকিপূর্ণ। এর সমাধান হিসেবে প্ল্যাটফর্মগুলো নিজেরাই বয়স অনুযায়ী রেটিং এবং সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু করতে পারে। এছাড়াও, সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা (যেমন ধর্মীয় অবমাননা বা ঘৃণা ছড়ানো নিষিদ্ধ) এবং দর্শকদের সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।

ওটিটি সেন্সরশিপ নিয়ে এই বিতর্ক সহজে শেষ হওয়ার নয়। আসল প্রশ্ন হলো, আমরা কি এমন একটি ভারসাম্য তৈরি করতে পারব যেখানে নির্মাতারা মুক্তভাবে গল্প বলতে পারবেন এবং সমাজও তার নৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ রক্ষা করতে পারবে?