নব্বইয়ের দশকে মঞ্চনাটক দিয়ে পথচলা শুরু করেছিলেন মোশাররফ করিম। সময়ের সঙ্গে সেই যাত্রা ছড়িয়ে গেছে টেলিভিশন, চলচ্চিত্র আর এখন ওটিটি পর্যন্ত। তাঁর অভিনয়ের পরিধি এতটাই বিস্তৃত যে একটিমাত্র ছাঁচে তাঁকে আটকে রাখা কঠিন। সিরিয়াস, সংযত, দগ্ধ বা নিঃসঙ্গ মানুষের চাপা সংকট আর অদৃশ্য ক্ষয়কে পর্দায় সত্যি করে তোলাই তাঁর অভিনয়ের মূল শক্তি।
‘মহানগর’-এর ওসি হারুন হোক, কিংবা ‘মোবারকনামা’র মোবারক সংলাপ, শরীরী ভাষা, আর চোখের ভেতরের সেই নীরব আগুনে প্রত্যেক চরিত্রেই তিনি তুলে ধরেন নতুন রূপ। ‘অজ্ঞাতনামা’ থেকে ‘মহানগর’, নানা কাজে তিনি দেখিয়েছেন, মানুষের গোপন কষ্টই আসলে প্রকাশের চেয়ে বড় অভিনয় উপাদান।
এবার এক নতুন চরিত্রে
দীর্ঘ অভিনয়জীবনে যেটি তিনি কখনো করেননি স্ট্যান্ড-আপ কমেডির চরিত্র। সেই বৃত্তও এবার ভাঙছেন মোশাররফ করিম। চরকি অরিজিনাল ফিল্ম ‘ডিমলাইট’-এ তিনি প্রথমবারের মতো অভিনয় করছেন এক স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান রূপে। মানুষকে হাসানোই যার জীবিকা, অথচ নিজের হাসিটাই ক্রমে হারিয়ে গেছে।
হাসির আড়ালে মধ্যবয়সের দহন
‘ডিমলাইট’ শুধু কমেডি নয়। গল্পের কেন্দ্রে আছে মধ্যবয়সী জীবনের সংকট দায়িত্ব, সংসার, সম্পর্ক আর কাজের চাপে আসল অনুভূতিগুলো যেন আলো-আঁধারিতে মিলিয়ে যায়। নির্মাতা শরাফ আহমেদের ভাষায়, জীবনের কিছু সমস্যা শুধু পরিমিত আলোতেই দেখা যায়। সেই প্রতীকী আলোই হচ্ছে ‘ডিমলাইট’, যেখানে দর্শক দেখবে মোশাররফ করিমের এক ভিন্ন রূপ।
চরকি কীভাবে কৌতূহলটা তৈরি করল
২০ নভেম্বর চরকি প্রথমবার ইঙ্গিত দেয়, “মোশাররফ করিম চরকিতে ফিরছেন নতুন রূপে!” এই পোস্টেই কৌতূহল শুরু। ২৩ নভেম্বরের আরেক পোস্টে লেখা হয়, “লাইফটাই একটা জোক, আর সবচেয়ে বড় জোক মিডলাইফ ক্রাইসিস।” এতে পরিষ্কার হয়, হাসির মোড়কে জীবনের গভীর অস্থিরতার কথাই বলবে ‘ডিমলাইট’। ২৫ নভেম্বর পোস্টার প্রকাশের পর নিশ্চিত হয়, এটি মিনিস্ট্রি অব লাভ প্রজেক্টের ষষ্ঠ চলচ্চিত্র।
নির্মাতা, শিল্পী আর গল্পের মানুষগুলো
ফিল্মটি পরিচালনা করেছেন শরাফ আহমেদ জীবন। গল্প, সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেছেন নাহিদ হাসনাত। অভিনয়ে আছেন মোশাররফ করিম, তানজিকা আমিন, পারসা ইভানা ও পরিচালক নিজেও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে।
তানজিকা আমিন মনে করেন, “এই গল্পটা এখনই বলা উচিত।” পারসা ইভানার কাছে গল্পটি খুব জীবন্ত হাসিও আছে, সংকটও আছে, আর খুব কাছের জীবনের মতোই সত্য।
মোশাররফ করিমের চোখে ‘ডিমলাইট’
এই গল্পে তিনি দেখেন দৈনন্দিন জীবনের আবরণ চিনি, টুথপেস্ট, স্কুল ফি যেগুলো সম্পর্ককে ঢেকে ফেলে। সেই আড়ালে চাপা পড়ে যায় ভালোবাসা, ঘ্রাণ আর আত্মপরিচয়। ‘ডিমলাইট’ সেই ঢাকা-পড়া অনুভূতিগুলোকেই তুলে ধরবে।
মিনিস্ট্রি অব লাভ আরও একটি অধ্যায়
এর আগে ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’, ‘লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগামী’, ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’, ‘ফরগেট মি নট’, ‘৩৬-২৪-৩৬’ প্রতিটি সিনেমাই সম্পর্কের ভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রশংসা কুড়িয়েছে। চরকির নির্বাহী রেদওয়ান রনি বলেন, ভালো কনটেন্টের জন্য সময় লাগলেও দর্শক অপেক্ষা করেন। সহ-প্রযোজক নুসরাত ইমরোজ তিশার বিশ্বাস, ‘ডিমলাইট’ আগের ধারাবাহিকতাই বজায় রাখবে।
নতুন অধ্যায়ের সামনে দাঁড়িয়ে
মঞ্চ থেকে টেলিভিশন, সিনেমা থেকে ওটিটি দীর্ঘ পথ পার করা মোশাররফ করিম এবার হাসির আড়ালে দেখাতে চান জীবনের নির্মম সত্য। তাই ‘ডিমলাইট’ শুধু নতুন একটি সিনেমা নয়, তাঁর ক্যারিয়ারের নতুন বাঁকও বটে। এখন দেখার বিষয়, সিরিয়াস চরিত্রের রাজপথ ছেড়ে কমেডির পথে হাঁটতে গিয়ে তিনি দর্শককে কোথায় নিয়ে যান।