শৈশবেই তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হতে হয়েছিল ফ্যাশন ডিজাইনার মাসাবা গুপ্তাকে। তার জন্মের পরই হাসপাতাল থেকে চুরি হয়ে যায় তার জন্ম সনদ এবং সেটি ফাঁস করে দেওয়া হয় সংবাদ মাধ্যমে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সেই বেদনাদায়ক ঘটনার কথা স্মরণ করলেন নিনা গুপ্তার কন্যা মাসাবা, যেখানে তিনি স্পষ্ট করে জানালেন, কেন এবং কার ইশারায় এই নিষ্ঠুর কাজ করা হয়েছিল।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মাসাবা গুপ্তা তার জীবনের বেশ কিছু কঠিন সময়ের কথা তুলে ধরেন, যার মধ্যে ছিল উদ্বেগ (anxiety) এবং প্রসব-পরবর্তী সংগ্রাম (postpartum struggles)। কিন্তু সবচেয়ে গুরুতর যে ঘটনাটি তিনি সামনে আনেন, তা ঘটেছিল তার সদ্যোজাত থাকাকালীন। সাংবাদিক বরখা দত্তের সাথে কথা বলার সময় আবেগপ্রবণ হয়ে মাসাবা বলেন, "আমি যখন জন্মেছিলাম, আমার জন্ম সনদ হাসপাতাল থেকে চুরি করে সংবাদ মাধ্যমে ফাঁস করা হয়েছিল এবং একটি কাগজের প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছিল। কারণ কেউ প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে আমি একজন অবৈধ সন্তান।"

মাসাবা জানান, ৯ বা ১০ বছর বয়সে বিষয়টি তিনি কিছুটা বুঝতে পেরেছিলেন, কিন্তু কেন এমন নিষ্ঠুরতা করা হয়েছিল, তা আজও তিনি বুঝে উঠতে পারেননি। তিনি স্মরণ করেন, তার মা নিনা গুপ্তার জন্য সেই পরিস্থিতি কতটা কঠিন ছিল। “আমি এখানে বসে এর জন্য দুঃখ বোধ করতে পারি, কিন্তু আমার মা কীভাবে এটা সামলেছিলেন, তা আমি জানি না,” বলেন মাসাবা।

এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তির নামও উল্লেখ করেছেন মাসাবা। তিনি সরাসরি আঙুল তুলেছেন প্রয়াত প্রখ্যাত সাংবাদিক, কবি ও চিত্র নির্মাতা প্রীতিশ নন্দীর দিকে। মাসাবা বলেন, "প্রয়াত মিস্টার প্রীতিশ নন্দীই আসলে এই পুরো কাজটা করেছিলেন। আমি তার বিরুদ্ধে কিছু মনে করি না, তবে আমি জানতে চাই কেন। আমি বারবার প্রশ্ন করি, কেন কেউ এমন কাজ করবে।"

এই ঘটনাটি ঘটে ১৯৮৯ সালে, যখন নিনা গুপ্তা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন ক্রিকেটার ভিভিয়ান রিচার্ডসের কন্যা মাসাবার জন্ম হয়। ভিভিয়ান রিচার্ডস সেই সময় বিবাহিত থাকায় নিনা তাকে একা মা হিসেবে বড় করার সিদ্ধান্ত নেন।

এর আগে এক সাক্ষাৎকারে নিনা গুপ্তাও এই ঘটনার ভয়াবহতা তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রীতিশ নন্দী কাউকে পাঠিয়ে হাসপাতাল থেকে মাসাবার জন্ম সনদ চুরি করিয়েছিলেন। সনদ চুরির পর সেটিকে ব্যবহার করে একটি বিশেষ আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই প্রসঙ্গে নিনা তার ক্ষোভ উগরে দিয়ে প্রীতিশ নন্দীর সমালোচনা করেছিলেন। প্রীতিশ নন্দী ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি প্রয়াত হন।

মাসাবা গুপ্তা-র এই বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি ফের একবার প্রশ্ন তুলল, সংবাদ প্রকাশের নামে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এমন চরম বিদ্বেষমূলক আক্রমণ কতটা কাম্য? বিশেষ করে যখন এই ঘটনা এক জননী ও তার সদ্যোজাত সন্তানের জীবনে গভীর মানসিক ক্ষত সৃষ্টি করেছিল।