অর্ষার মা দীর্ঘ সাত বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন। এত দীর্ঘ সময় ধরে মায়ের সেবাযত্নের পাশাপাশি শুটিং সামলাতে হয়েছে তাঁকে। কখনো মায়ের শারীরিক অবস্থার কারণে কাজ বাদ দিয়েছেন, আবার কখনো শুটিংয়ের ফাঁকে মায়ের খবর নিতে নিতে সময় পার করেছেন। তবে জুন মাসে হঠাৎ মাকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এই অভিনেত্রী। সেই শোক সামলাতে গিয়ে কাজ থেকে বিরতি নেন কিছুদিন। আবেগে ভরা কণ্ঠে অর্ষা বলেন, “মা-বাবা চলে গেলে তখনই বোঝা যায়, তাঁদের গুরুত্ব কতটা। মাকে এখন আমার সবচেয়ে বেশি দরকার। মা থাকাটা আমার কাছে শক্তির মতো ছিল, আর এখন মনে হয় আমি খুব দুর্বল হয়ে গেছি।”
মায়ের স্মৃতিতে কাজ
অর্ষার জীবনে মায়ের উপস্থিতি শুধু সংসারেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তাঁর কাজের সঙ্গেও জড়িয়ে ছিল। শুটিংয়ে গেলে সব সময় একটি দুশ্চিন্তা ঘিরে থাকত মা কেমন আছেন, কী করছেন। তিনি জানান, “মা আমার ছায়ার মতো ছিলেন। তিন মাস আগেও মায়ের সঙ্গে প্রতিদিন কত কথা হতো। কী খাচ্ছি, কী রান্না হবে, এসব নিয়ে আলাপ হতো। এখনো বিশ্বাস হয় না, সেই মানুষটা নেই। অনেক সময় মনে হয় শুটিং শেষ করে বাসায় গেলে মা অপেক্ষা করছেন।” মাকে হারানোর এই শূন্যতা তাঁর প্রতিটি কাজের মুহূর্তে অনুভূত হয়।
চরিত্রের অপেক্ষায় বিরতি
অভিনয় ক্যারিয়ারে সর্বশেষ তাঁকে দেখা গেছে ধারাবাহিক ক্যাম্পাস নাটকে। এরপর ওটিটিতে কিছু কাজ করলেও ছোট পর্দায় আর নিয়মিত ছিলেন না। শুধুমাত্র সংখ্যার খাতিরে কাজ করতে চাননি তিনি। অপেক্ষা করেছেন মানসম্পন্ন গল্প আর শক্তিশালী চরিত্রের জন্য। সেই অপেক্ষার ফল মিলেছে সাজ্জাদ সুমনের খুশবু ধারাবাহিকে। সেখানে অর্ষা অভিনয় করছেন সেতু চরিত্রে একজন সাহসী নারী, যিনি গ্রাম থেকে শহরে আসা মেয়েদের আগলে রাখেন, পোশাকশ্রমিকদের হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন।
অভিনেত্রী জানান, “মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার জন্য সময় নিয়েছি। কাজের মান আমার কাছে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। ধারাবাহিক নাটকে দেখা যায়, প্রথম দিকে দর্শক তৈরি হয়, কিন্তু শেষের দিকে মান ধরে রাখতে পারে না। আমি চাই যে কাজ করব, সেটাতে যেন নিজেকে পুরোপুরি ডুবিয়ে দিতে পারি। একই ধরনের কাজ করতে চাই না।”
শিল্পীর দায়িত্ব ও সমাজ
শিল্পীর দায়বদ্ধতা নিয়ে অর্ষার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। তাঁর মতে, একজন সাধারণ মানুষের চেয়ে শিল্পীর দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। “শিল্পী ট্যাগ থাকলে দায়িত্বও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আমি চাই আমার কাজের মধ্য দিয়ে ইতিবাচক ছাপ রাখতে। দর্শক চরিত্রের ভেতর দিয়েই প্রভাবিত হয়।” খুশবু ধারাবাহিকে তাঁর চরিত্র সেতু সমাজের অবহেলিত মেয়েদের জন্য দাঁড়ায়, তাঁদের হয়ে কথা বলে।
অর্ষা বলেন, “আমাদের দেশে নারীকেন্দ্রিক গল্প তুলনামূলকভাবে কম। নারী চরিত্রগুলোকে অনেক সময় শোপিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমি চাই ভিন্ন, ইতিবাচক নারী চরিত্রে অভিনয় করতে। ধীরস্থিরভাবে চরিত্রের ভেতরে থেকে কাজ করতে চাই।” বর্তমানে তিনি বৈশাখী টিভির ধারাবাহিক গিট্টু-তেও এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন, যা দর্শকের মনে শক্ত প্রভাব ফেলবে বলে আশা করছেন।
সিনেমার পরিকল্পনা
ওয়েব ফিল্ম নেটওয়ার্কের বাইরে (পরিচালক: মিজানুর রহমান আরিয়ান) দিয়ে চার বছর আগে আলোচনায় আসেন অর্ষা। সেখানে তাঁর অভিনীত তানিয়া চরিত্রটি এখনো দর্শকের মনে দাগ কেটে আছে। সিনেমায় তিনি যুক্ত হচ্ছেন কি না সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত কিছু জানাতে চাননি এই অভিনেত্রী। তবে জানালেন, ভালো গল্প তাঁর হাতে আছে। “আমি চাই সিনেমায় এসে আমার আগের কাজগুলোকে ছাড়িয়ে যেতে। সেই ধৈর্য আমার আছে। দর্শকদের সামনে অবশ্যই ভালো খবর আসবে, তবে নিশ্চিত না করে এখনই কিছু বলতে চাই না।”