“আমি চাই মানুষ আস্তে আস্তে আমাকে ভুলে যাক” - তাহসান
বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের সবচেয়ে জনপ্রিয় কণ্ঠগুলোর একটি তাহসান খান। পেশাদার সংগীতে দুই দশকেরও বেশি সময় পার করার পর হঠাৎই ঘোষণা দিলেন বিদায়ের। ২৫ বছরের সংগীতজীবনের পূর্তির মঞ্চে দাঁড়িয়েই জানালেন এটাই তাঁর শেষ ট্যুর। মেলবোর্নের কনসার্টে সেই ঘোষণায় মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ভক্তরা। আবেগে ভাসছিলেন সবাই, কিন্তু সিদ্ধান্তে ছিলেন অটল তাহসান।
তিনি জানালেন, ঢাকায় আগেই নেওয়া দু-একটি প্রতিশ্রুতিশীল আয়োজন শেষ করলেই গানের ভুবন থেকে সরে দাঁড়াবেন। “অনেক দিন ধরেই মনে হচ্ছিল বিদায় নেওয়া উচিত। এবার সময়টা সঠিক মনে হচ্ছে। সূর্যের মধ্যগগনে থাকা অবস্থায় বিদায় নেওয়াই শ্রেয় মনে করি।”
গান থেকে সরে দাঁড়ানো
তাহসান বললেন, তাঁর হাতে থাকা তিনটি নতুন গান আর প্রকাশ করবেন না। কেবল ‘পোরসেলিনা তাহসান’স প্লেলিস্ট প্রকল্পের শেষ গানটি হয়তো প্রকাশিত হবে। এরপরই থামবেন তিনি। “স্টুডিও বা অনলাইন কোথাও আর আমাকে শোনা যাবে না।”
এই সিদ্ধান্ত শুধু সময়ের দাবি নয়, জীবনের দর্শনও বদলে দিয়েছে তাঁকে। “মেয়ের কথা আসলে বয়স বোঝাতে বলেছিলাম। এখন নিজের কাছেই প্রেমের গান গেয়ে মঞ্চ মাতানোটা মানায় না। অনেকের জন্য হয়তো সহজ, কিন্তু আমার কাছে বেমানান।”
তারকা জীবনের ভার
তাহসানের মতে, পরিবার ও পেশার ভারসাম্য বড় সমস্যা ছিল না। কিন্তু তারকা হয়ে বেঁচে থাকার দায়ভারই তাঁর জন্য কঠিন হয়ে উঠেছিল। “পাবলিক ফিগার হিসেবে বেঁচে থাকার চাপটা অসম্ভব বেশি। তা আর নিতে চাই না।”
মঞ্চকেন্দ্রিক জীবনের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিও বদলেছে। “মঞ্চে অথবা মঞ্চের বাইরে যতটুকু দেওয়ার দিয়েছি। আর কিছু দেওয়ার নেই মনে হচ্ছে। ২৫ বছরে যে পরিমাণ ভালোবাসা পেয়েছি, সেই ভান্ডার নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে পারব।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বিদায়
প্রায় কোটি অনুসারীর ফেসবুক পেজ এবং কয়েক মিলিয়ন ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ার থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে। অ্যাকাউন্টগুলো ডিঅ্যাকটিভেট করেছেন। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “অবসরে যাওয়া মানুষের এসবের দরকার নেই। সোশ্যাল মিডিয়া অসম্ভব টক্সিক হয়ে গেছে। আমি চাই মানুষ আমাকে আস্তে আস্তে ভুলে যাক। অনলাইনে থাকলে তো ভোলা সম্ভব হতো না।”
অভিনয় থেকে গান, তারপর নীরবতা
গানের পাশাপাশি অভিনয়েও সাফল্য পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অভিনয় থেকে সরে এসেছিলেন আরও আগেই। এবার গানের ইতি টানলেন। ভবিষ্যতে তাঁকে বিনোদন অঙ্গনের কোনো আড্ডাতেও পাওয়া যাবে না। অন্য কিছু পরিকল্পনা থাকলেও সেগুলো তিনি গোপন রাখতে চান। “সেগুলো একান্তই ব্যক্তিগত। নিয়ে ঘটা করে কিছু বলতে চাই না। একটু বেশি দার্শনিক শোনাবে।”
ভক্তদের প্রতি শেষ বার্তা
তাহসানের কাছে ২৫ বছরের সংগীতজীবন মানেই কৃতজ্ঞতার ভান্ডার। “এত এত স্মৃতি, মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাজারো মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে গান গাওয়াটাই সবচেয়ে বেশি মিস করব। আফসোস নেই কোনো। প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি অনেক বেশি। এত ভালোবাসা এই দেশের মানুষ আমাকে দিয়েছে আর কী চাইতে পারি?”
ভক্তদের উদ্দেশে তাঁর শেষ বার্তা ছিল গানের ভাষায়:
“ধন্যবাদ তোমায়, সুরের বন্ধু ভেবেছ,
তুচ্ছ এই মানবে, কিছু খুঁজে পেয়েছ।”
তাহসান জানালেন, গান ছেড়ে দেওয়া তাঁর কাছে সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত। “যা জীবনের সবচেয়ে বেশি ভালোবেসেছি, তা ছেড়ে দেওয়া সহজ নয়। কিন্তু কিছু অভিজ্ঞতা এতটাই তীব্র আর করুণ ছিল যে এটাই আমার জন্য একমাত্র পথ। সাধারণ জীবনে ফিরে যেতে চাই।”