জাপানি চলচ্চিত্রে ফুটে উঠল বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের দুই বোনের গল্প
আসন্ন ৮২তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এই বছর এশিয়া থেকে বেশ কিছু প্রতিভাবান পরিচালক অংশ নিচ্ছেন। এ তালিকায় আছে বাংলাদেশের বাস্তবতার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত একটি জাপানি চলচ্চিত্র “Lost Land”। ছবিটির কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের দুই ছোট বোনের কাহিনি, যাদের বাস্তব জীবনের সংগ্রাম ও আশা-আকাঙ্ক্ষা উঠে এসেছে অনবদ্যভাবে।
“Lost Land” ছবির গল্প ৯ বছর বয়সী সামিরা ও ৪ বছরের সাফির দুর্দান্ত ভ্রমণের উপরে নির্মিত। পারিবারিক সংকটের কারণে তারা পালিয়ে যায় ক্যাম্প থেকে এবং মালয়েশিয়া হয়ে পরিবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। যদিও সিনেমাটি জাপানি পরিচালক আকিও ফুজিমোটো পরিচালিত, তবে শুটিং হয়েছে থাইল্যান্ডে। ছবিটি ‘অরিজোন্তে’ বিভাগের মূল প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছে, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমকালীন সিনেমাগুলো প্রতিযোগিতা করে।
এশিয়ার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে চীনের “The Sun Rises on Us All”, যা প্রেম ও ভুল বোঝাবুঝির মধ্য দিয়ে সম্পর্কের পুনর্জন্মের গল্প বলে। দক্ষিণ কোরিয়ার পরিচালক পার্ক চান-উকের “No Other Choice” চার বছর পর ফের ভেনিসের প্রতিযোগিতায় ফিরে এসেছে, যা থ্রিলার ও ড্রামার সমন্বয়ে গড়া। তাইওয়ানের “Girl” একটি ঐতিহাসিক পটভূমিতে এক কিশোরীর বেদনাদায়ক যাত্রা তুলে ধরে, আর “Back Home” সিনেমাটি কমেডি ও ড্রামার মিশ্রণে আলাদা ধরনের অভিজ্ঞতা দেয় দর্শকদের।
ইরানের “Divine Comedy” পরিচালনা করেছেন অলি আসগরী, যা তৃণমূল থেকে উঠে আসা প্রেমের গল্প হলেও দেশটির সামাজিক বাস্তবতাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। ভারতের তরুণ পরিচালক অণুপর্ণা রায়ের “Sons of Forgotten Trees” অভিবাসী অভিনেত্রী ও মুম্বাইয়ের সাবলেট জগতের পটভূমিতে নারীর সংগ্রাম ও জীবনের পরিবর্তন নিয়ে নির্মিত। থাইল্যান্ডের “Human Resource” সিনেমায় বর্তমান সময়ের জন্মহার হ্রাসের সমস্যার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
এই বছরের ভেনিস উৎসব ২৭ আগস্ট শুরু হয়ে ৬ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। উৎসবে মোট ২১টি সিনেমা প্রধান প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। প্রতিটি ছবি একেক দেশের সমাজ ও সংস্কৃতির নানা দিক তুলে ধরে আন্তর্জাতিক মহলে তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়।
বাংলাদেশের মতো দেশের গল্প যখন বিশ্ব চলচ্চিত্রের কেন্দ্রে আসে, তখন আমাদের সংস্কৃতি ও বাস্তবতার চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার সুযোগ হয়। “Lost Land” এর মতো সিনেমা সেটাই করে চলেছে—যা শুধু বিনোদন নয়, বরং মানবিক এবং সামাজিক দিক থেকে চিন্তার খোরাক দেয়।