দীর্ঘ এক বছরের বিরতি ভেঙে অবশেষে মঞ্চে ফিরছেন বাংলা গানের জনপ্রিয় তারকা কুমার বিশ্বজিৎ। গত বছর একমাত্র ছেলে নিবিড়ের দুর্ঘটনার পর থেকেই তার সমস্ত মনোযোগ ছিল ছেলের সুস্থতার দিকে। স্ত্রীসহ তিনি কানাডার একটি হাসপাতালে নিবিড়কে নিয়ে ছিলেন। চিকিৎসকদের নিরলস চেষ্টায় নিবিড় এখন অনেকটাই সুস্থ। ছেলের শারীরিক অবস্থার উন্নতির পর কুমার বিশ্বজিৎ এবার মনস্থির করেছেন যে, তিনি আবার তার প্রিয় মঞ্চে ফিরবেন।

একজন শিল্পীর কাছে মঞ্চই হলো সবচেয়ে বড় আনন্দের জায়গা, যেখানে তিনি সরাসরি শ্রোতাদের ভালোবাসার মুখোমুখি হতে পারেন। এই ভালোবাসা এবং ভালো লাগা পেতেই কুমার বিশ্বজিৎ আবারও গান নিয়ে ফিরছেন। আগামী ২৩ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে একটি স্টেজ শো-এর মাধ্যমে তার এই প্রত্যাবর্তন শুরু হবে। এরপর আরও পাঁচটি শো-তে তিনি গান গাইবেন—২৪ ও ৩০ আগস্ট এবং ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর।

কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, "সত্যি বলতে কী, নিবিড়ের দুর্ঘটনার পর থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশি ভাই-বোনেরা আমার ছেলের জন্য যে ভালোবাসা ও দোয়া দিয়েছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তারা নিয়মিত আমার ছেলের খোঁজ নিয়েছেন। তাদের এই ভালোবাসায় আমি সত্যিই মুগ্ধ।"

তিনি আরও বলেন, "সেই ভালোবাসার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই আমি আবার গানে গানে তাদের সামনে হাজির হচ্ছি। তাদের সামনে গান শোনানোর পাশাপাশি আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করতে চাই। কারণ, ঈশ্বরের কৃপায় এবং মানুষের ভালোবাসায় নিবিড় এখন অনেকটা সুস্থ। আমি চাই, সে যেন দ্রুত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে, আর এই দোয়া আমি সবার কাছে চাই।"

যারা তাকে অস্ট্রেলিয়ায় ছয়টি শো করার সুযোগ করে দিয়েছেন, তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন এই গুণী শিল্পী।

একজন শিল্পী হিসেবে কুমার বিশ্বজিতের অবদান বিশাল। তিনি একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। তার গান এবং সুর আজও শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যায়। অনেকেই মনে করেন, সংগীতে তার অবদানের জন্য তিনি ভবিষ্যতে একুশে পদকে ভূষিত হবেন। তিন বছর আগে তার আত্মজীবনীমূলক বই 'এবং বিশ্বজিৎ' প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে তার জীবনের বিভিন্ন অধ্যায় উঠে এসেছিল। এই বই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, "বইটি প্রকাশের পর আমার মনে প্রশ্ন জাগে, জীবনে এমন কী করেছি যার জন্য আত্মজীবনী লেখা প্রয়োজন? সংগীতে আমার অবদান খুব কমই মনে হয়। তবুও, আমার দীর্ঘ সংগীত জীবনের অনেক ঘটনা এই বইতে লিপিবদ্ধ হয়েছে।"

তার এই প্রত্যাবর্তন শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত জীবনেই নয়, বাংলা সংগীতপ্রেমীদের জন্যও এক আনন্দের খবর।