মানুষ ও তার পোষা প্রাণীর সম্পর্ক নিয়ে বহু চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় মানুষ ও কুকুরের বন্ধনের গল্প। আপনি যদি প্রাণীপ্রেমী হন, কিংবা মন ভালো করে দেওয়ার মতো কোনো সিনেমা দেখতে চান, তাহলে নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্রাজিলিয়ান চলচ্চিত্র ‘ক্যারামেলো’ (Caramelo) হতে পারে আপনার জন্য একদম উপযুক্ত পছন্দ। দিয়েগো ফ্রেইতাসের পরিচালনায় নির্মিত এ সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছেন রড আজেভেদো ও ক্যারোলিনা কাস্ত্রোর সঙ্গে পরিচালক নিজেও। ৯ অক্টোবর মুক্তির পরপরই এটি নেটফ্লিক্সের অ-ইংরেজি ভাষার গ্লোবাল টপ চার্টের শীর্ষে উঠে এসেছে।
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র পেদ্রো এক পরিশ্রমী তরুণ, যিনি রেস্তোরাঁয় শেফের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। একদিন হঠাৎই সুযোগ পান নিজের বানানো রেসিপি পরিবেশনের, যা সবাই পছন্দ করে এবং জায়গা পায় মূল মেনুতে। কিন্তু সেই আনন্দের দিনেই ঘটে এক অঘটন রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়ে এক পথকুকুর, ক্যারামেলো। সেই বিশৃঙ্খল ঘটনার মধ্য দিয়েই পেদ্রোর জীবনে আসে বড় পরিবর্তন। ক্যারামেলো ধীরে ধীরে তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে বন্ধু, ভরসা, এমনকি জীবনের অন্ধকারে আলোর দিশা।
‘ক্যারামেলো’ কোনো রূপকথা নয়, বরং বাস্তব জীবনের আবেগ, সংগ্রাম ও ভালোবাসার গল্প। এতে নেই অতিনাটকীয়তা বা বাড়াবাড়ি সংলাপ। পরিচালক ধীরে, গভীরভাবে গল্প বলেছেন, চরিত্রগুলোকে সময় নিয়ে গড়ে তুলেছেন। সিনেমার শুরুতেই দেখা যায় এক পথকুকুরের নিঃসঙ্গ জীবন, যা মুহূর্তেই দর্শকের মন কেড়ে নেয়। এই কুকুরের ভূমিকায় অভিনয় করেছে তিন মাস বয়সী একটি বাস্তব কুকুর আমেনদোইম (Amendoim)। বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করা এ কুকুরটির প্রাণবন্ত অভিনয় সিনেমাটিকে দিয়েছে এক অনন্য বাস্তবতা ও মায়া।
পরিচালক দিয়েগো ফ্রেইতাস শুধু আবেগ নয়, ব্রাজিলের সংস্কৃতিকেও ফুটিয়ে তুলেছেন ছবিতে। ব্রাজিলে ‘ক্যারামেলো’ নামের মিশ্র জাতের কুকুর খুব জনপ্রিয়, এমনকি তাদের জাতীয় প্রতীকে স্থান দেওয়ার দাবিও উঠেছিল। পাশাপাশি সিনেমায় উঠে এসেছে পরিবারের ঐতিহ্যবাহী রান্না, চার্চে প্রার্থনা, পশু প্রশিক্ষণ এবং জীবনের সাধারণ অথচ সুন্দর দিকগুলো।
অভিনয়ে রাফায়েল ভিত্তি অসাধারণ। পেশাদারিত্ব, আবেগ ও মানবিকতার মিশেলে তিনি পেদ্রোকে বাস্তব করে তুলেছেন। ক্যারামেলোর সঙ্গে তার সম্পর্ক পর্দায় দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। অন্যান্য চরিত্রে আরিয়ান বোটেলহো, নোমিয়া অলিভেইরা ও ব্রুনো ভিনিসিয়াসও প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। সিনেমাটোগ্রাফিও চোখ জুড়ানো মাটির রঙের টোন সিনেমাটিকে দিয়েছে প্রশান্তির আবহ, যা একই সঙ্গে পেদ্রোর ভেতরের কষ্ট ও শান্তি দুটোকেই প্রতিফলিত করে।
সিনেমার আবহসংগীতের সুরগুলো গল্পের আবেগের সঙ্গে নিখুঁতভাবে মানানসই। এখানে গান দিয়ে গল্প বলা হয়নি, বরং সুরই গল্পের আবহ তৈরি করেছে। সব মিলিয়ে ‘ক্যারামেলো’ এমন এক সিনেমা, যা আপনাকে হাসাবে, কাঁদাবে, আবার পোষা প্রাণীদের প্রতি নতুন করে সহমর্মী করে তুলবে। গল্পের পরিণতি সহজেই অনুমান করা গেলেও এর আন্তরিকতা ও বাস্তবতা একে করে তুলেছে হৃদয়ছোঁয়া ও দেখার মতো এক অভিজ্ঞতা।
সংক্ষেপে, ‘ক্যারামেলো’ হলো মানুষ ও প্রাণীর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার গল্প, সহজ, সত্য ও গভীরভাবে বলা এক মানবিক চলচ্চিত্র।