সাত বছরে তৈরি ‘অ্যাভাটার ৩’-এর সুর! ১৯৫ মিনিটের ছবিতে চার গুণ বেশি মিউজিক, নীরবতাই যেখানে সবচেয়ে শক্তিশালী
জেমস ক্যামেরনের ‘অ্যাভাটার’ সিরিজ মানেই প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত। ভিএফএক্স, অ্যানিমেশন কিংবা ভিজ্যুয়াল স্কেলের পাশাপাশি এবার আলোচনায় উঠে এসেছে সিরিজের তৃতীয় ছবি ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’-এর সংগীত। সুরকার সাইমন ফ্র্যাংলেন এই ছবির সংগীত তৈরির অভিজ্ঞতা নিয়ে যে তথ্য প্রকাশ করেছেন, তা শুনে রীতিমতো বিস্মিত হচ্ছেন দর্শক ও সিনেমাপ্রেমীরা।
সাইমন ফ্র্যাংলেন জানিয়েছেন, ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’-এর সংগীত তৈরি করতে তাঁর সময় লেগেছে প্রায় সাত বছর। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি লিখেছেন ১,৯০০-এর বেশি পৃষ্ঠার অর্কেস্ট্রাল স্কোর। তাঁর দাবি, একটি সাধারণ হলিউড সিনেমার তুলনায় এই ছবিতে প্রায় চার গুণ বেশি সংগীত ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৫ মিনিটের প্রায় পুরো ছবিতেই রয়েছে মিউজিক। এমনকি ছবির এডিটিং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলায়, মুক্তির মাত্র পাঁচ দিন আগেও সুরের কাজ শেষ করতে হয়েছে তাঁকে।
গল্পের আবেগী প্রেক্ষাপট সংগীতের ধরনেও বড় প্রভাব ফেলেছে। ছবিতে জ্যাক সুলি ও নেইতিরি তাঁদের সন্তানের মৃত্যুর শোকে ভেঙে পড়েন, যার প্রভাব পড়ে তাঁদের সম্পর্কেও। এই মানসিক দূরত্ব বোঝাতে ফ্র্যাংলেন সংগীতে ব্যবহার করেছেন ভাঙন ও নীরবতার অনুভূতি। তাঁর মতে, শোক প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক সময় নীরবতাই সবচেয়ে শক্তিশালী বাদ্যযন্ত্র হয়ে ওঠে, আর এই ছবিতে সেটিই প্রাধান্য পেয়েছে।
অন্যদিকে, উইন্ড ট্রেডার্স নামে যাযাবর এক গোষ্ঠীর জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের সংগীত তৈরি করা হয়েছে। এই অংশে প্রাণবন্ত ও মজার সুর ব্যবহার করা হলেও, গিটার বা ড্রামের মতো পরিচিত যন্ত্রের বদলে প্যান্ডোরার উপযোগী একেবারে নতুন বাদ্যযন্ত্র তৈরি করা হয়েছে। এসব যন্ত্র থ্রিডি প্রিন্ট করে বানানো হয় এবং অভিনেতারাই শুটিং সেটে বাস্তবেই সেগুলো বাজিয়েছেন।
সাইমন ফ্র্যাংলেনের সঙ্গীতজীবন শুরু হয়েছিল মাইকেল জ্যাকসন ও হুইটনি হিউস্টনের মতো বিশ্বসেরা শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে। চলচ্চিত্রে তাঁর যাত্রা শুরু হয় ‘ড্যান্সেস উইথ উলভস’, ‘সেভেন’ ও ‘টাইটানিক’-এর মতো ছবিতে। ফ্র্যাংলেন জানান, ‘টাইটানিক’-এর সময় সংগীতের বাজেট সীমিত থাকলেও, ‘অ্যাভাটার’ সিরিজে তিনি পেয়েছেন সম্পূর্ণ সৃজনশীল স্বাধীনতা।
জেমস ক্যামেরনের বিশ্বাস, ভালো কাজের জন্য সময় দেওয়া জরুরি। সেই বিশ্বাস থেকেই এই ছবিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার না করে, বাস্তব সঙ্গীতশিল্পীদের দিয়েই পুরো সংগীত নির্মাণ করা হয়েছে।
আগামী ১৯ ডিসেম্বর মুক্তি পেতে চলেছে ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’। এখন সাইমন ফ্র্যাংলেন ও পুরো টিমের অপেক্ষা দর্শক প্রতিক্রিয়ার দিকে, কারণ এই ছবির বাণিজ্যিক সাফল্যের ওপরই নির্ভর করছে ‘অ্যাভাটার ফোর’ ও ‘অ্যাভাটার ফাইভ’ নির্মাণের ভবিষ্যৎ।