যিনি সুর দিয়ে ছবি আঁকতেন এবং যাঁর গানে দেশপ্রেম হয়ে উঠত ইবাদত আর বিরহ হয়ে উঠত শৈল্পিক এক বিষণ্নতা, তিনি হলেন কিংবদন্তি সুরকার Alauddin Ali। ১৯৫২ সালের আজকের এই দিনে মুন্সিগঞ্জের এক সংগীত পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন এই কালজয়ী মানুষটি। আজ তাঁর জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করছে পুরো দেশ।

সব বড় গল্পের শুরুটা সহজ হয় না। ১৯৭৪ সালে ‘সন্ধিক্ষণ’ সিনেমার মাধ্যমে প্রথম সংগীত পরিচালনা করলেও সাফল্য ধরা দেয়নি শুরুতে। কিন্তু ১৯৭৮ সালে আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ সিনেমাটি যেন আলাউদ্দিন আলীর জন্য সাফল্যের চাবিকাঠি হয়ে আসে। ‘আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার’ সৈয়দ আব্দুল হাদীর কণ্ঠে এই একটি গানই পাল্টে দেয় তৎকালীন ঢাকাই সিনেমার গানের ধারা। এরপর থেকে তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

আলাউদ্দিন আলীর সুর করা দেশাত্মবোধক গানগুলো শুনলে আজও বাঙালির শরীরে কাঁটা দেয়। ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি’ কিংবা ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’,এই গানগুলো কেবল সুর নয়, এগুলো প্রতিটি বাঙালির বেঁচে থাকার প্রেরণা। অন্যদিকে ‘আমায় গেঁথে দাও না মাগো একটা পলাশ ফুলের মালা’ গানটির সুর এমন এক জাদুকরী শক্তিতে গড়া, যা কোনো কান্নার দৃশ্য ছাড়াই শ্রোতার বুক ভার করে দেয়।

তিনি শুধু বড় বড় শিল্পী নিয়ে কাজ করেননি, বরং তাঁর হাত ধরেই ইন্ডাস্ট্রিতে ডানা মেলেছেন বহু নতুন প্রতিভা। Ayub Bachchu থেকে শুরু করে কনকচাঁপা, কুমার বিশ্বজিৎ, মিতালী মুখার্জী কিংবা সামিনা চৌধুরী,চলচ্চিত্রের গানে এঁদের অনেকের পথচলা শুরু হয়েছিল আলাউদ্দিন আলীর জাদুকরী স্পর্শে। প্রায় পাঁচ হাজার গানের এই স্রষ্টার ঝুলিতে রয়েছে ‘ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়’, ‘শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে’ এবং ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসত’-এর মতো অগণিত মণিমানিক্য।

ভারতের Lata Mangeshkar কিংবা Asha Bhosle থেকে শুরু করে উপমহাদেশের প্রায় সব নামী শিল্পী কণ্ঠ দিয়েছেন তাঁর সুরে। Sabina Yasmin একবার বলেছিলেন যে আলাউদ্দিন আলীর মতো গুণী মানুষ যুগে যুগে জন্মান না। ২০২০ সালে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও তাঁর অমর সৃষ্টিগুলো কোটি বাঙালির হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।

আলাউদ্দিন আলী শুধু গান বানাননি, তিনি একটি উন্নত সংগীত রুচি তৈরি করেছিলেন। তাঁর জন্মদিনে তাই শুধু স্মরণ নয়, বরং বাংলা গানের ভিত্তিকে শক্ত করার জন্য তাঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।