'উইকেড: ফর গুড' উন্মাদনা! রূপকথা নয়, এটি আসলে বন্ধুত্বের ভাঙন আর নৈতিকতার কঠিন গল্প!
বক্স অফিসে গ্রিন ম্যাজিক: আরিয়ানা আর সিনথিয়া কি গ্ল্যামার আর আবেগে বিশ্ব মাতালেন।
সিডনি শহরের এডমন্ডসন পার্কের ইডি স্কোয়ারের সেই শনিবার সন্ধ্যাটি ছিল এক রঙিন উৎসব। সিনেমা হলের প্রবেশপথের সামনে উপচে পড়া ভিড়, শিশুদের হাতে রঙিন পপকর্নের বাক্স এবং দর্শক-সারিতে গোলাপি ও হালকা সবুজ পোশাকের ছড়াছড়ি-সব মিলিয়েই বোঝা যাচ্ছিল, এটি কোনো সাধারণ মুভি নাইট নয়। 'উইকেড: ফর গুড' দেখতে আসা দর্শকেরা যেন ইচ্ছাকৃতভাবেই সিনেমার জগৎটাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন বাস্তব জীবনে। মনে হচ্ছিল, হলে ঢোকার আগেই সবাই যেন এক রঙিন রূপকথার আবহে ঢুকে পড়েছে। আলো ঝলমলে লবি আর চারপাশে ভেসে বেড়ানো পরিচিত মিউজিক্যাল সুরের সঙ্গে শিশুদের চোখে খাঁটি উচ্ছ্বাস মিশে তৈরি হচ্ছিল এক আলাদা 'ভাইব'।
ব্রডওয়ের জনপ্রিয় মিউজিক্যাল 'উইকেড'-এর সিক্যুয়েল হিসেবে 'উইকেড: ফর গুড'-এর কাছে প্রত্যাশার চাপ স্বাভাবিকভাবেই প্রবল ছিল। পরিচালক জন এম চু এবার রঙিন জাঁকজমকের পাশাপাশি গল্পের আবেগময় স্তরটিকে আরও গভীর করেছেন। আগের পর্বের দৃশ্যবৈভব এখানে কিছুটা সংযত হলেও সম্পর্ক, দ্বন্দ্ব আর বিশ্বাসঘাতকতার সূক্ষ্ম টানাপোড়েনে এই পর্বটি এক অন্য মাত্রা পায়। ছবিটির সবচেয়ে বড় শক্তি হলো, এটি একই সঙ্গে শিশু ও বড়দের জন্য দুই রকম অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারে। শিশুদের কাছে এটি উড়াল দেওয়া ডাইনি, ঝলমলে পোশাক আর জাদুকরি দৃশ্যের ফ্যান্টাসি হলেও, বড়দের চোখে ধরা পড়ে চরিত্রগুলোর দ্বিধা, ক্ষমতার ব্যবহার, বন্ধুত্বের ভাঙন এবং নৈতিক সিদ্ধান্তের ভার। একই গল্প, অথচ বয়সভেদে পাঠ বদলে যাওয়া-এটাই 'উইকেড: ফর গুড'-এর সবচেয়ে বড় সফলতা।
এই ছবির উন্মাদনা শুধু সিনেমা হলের ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সিডনির নানা শপিং সেন্টার আর ডিপার্টমেন্ট স্টোরেও চোখে পড়ে সিনেমার থিমে সাজানো পণ্য। কেমিস্ট ওয়্যারহাউসে সুগন্ধি, কোথাও ম্যাজেন্টা ও সবুজ রঙের মিষ্টি, কফি শপের কাচে পোস্টার-সব মিলিয়ে মনে হয় যেন পুরো সিডনি শহরই এই সিনেমার রঙে রঙিন।
বিশ্বব্যাপীও এই উন্মাদনার প্রতিফলন স্পষ্ট। ইউনিভার্সাল পিকচার্সের প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের সিনেমাটি মুক্তির পর এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছে। শুধু উত্তর আমেরিকাতেই প্রথম দিনে ছবিটির আয় দাঁড়ায় প্রায় ৬৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার, যা ইউনিভার্সালের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ওপেনিং।
সমালোচকরা এই পর্বটিকে আগেরটির তুলনায় বেশি পরিণত বললেও, হলভর্তি দর্শকের প্রতিক্রিয়া বলছে ভিন্ন কথা। শিশুদের হাততালি এবং বড়দের নীরব মনোযোগ বুঝিয়ে দেয়, ছবিটি আবেগের জায়গায় ঠিকই কাজ করছে। অভিনয়ের ক্ষেত্রে ছবির প্রাণ দুই প্রধান চরিত্র। এলফাবা চরিত্রে সিনথিয়া এরিভো তাঁর শক্তিশালী কণ্ঠ আর সংবেদনশীল অভিনয়ে গল্পের আবেগময় ভার এককভাবে টেনে নিয়ে যান। অন্যদিকে গ্লিন্ডা চরিত্রে আরিয়ানা গ্রান্ডে পপ তারকার পরিচিত ছাঁচ ভেঙে মজাদার, একই সঙ্গে দ্বিধাগ্রস্ত ও মানবিক এক চরিত্র উপহার দেন। হল ছাড়ার সময় শিশুদের উচ্ছ্বাস আর বড়দের আলাপ শুনে বোঝা যায়, সুর আর গল্পে মোড়া এই সন্ধ্যাটা অনেক দিন মনে থাকবে।
'উইকেড: ফর গুড' আবারও মনে করিয়ে দেয়, রূপকথা কেবল শিশুদের জন্য নয়। ভালো–মন্দের সীমারেখা, বন্ধুত্বের টানাপোড়েন, নিজের সিদ্ধান্তের দায় আর নিজেকে চেনার লড়াই-এই বিষয়গুলি সিনেমাটিকে করে তোলে আরও অর্থবহ ও বহুমাত্রিক।