রজনীকান্ত ও লোকেশ কঙ্গরাজের ‘কুলি’: প্রত্যাশার ছায়া
রজনীকান্তের সিনেমা মুক্তির দিন তামিলনাড়ুর সিনেমাহলগুলো হুলুস্থুলে ভরে ওঠে, ছুটি নিয়ে অফিসের মানুষ থেকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, সবাই পর্দায় বসতে ছুটে আসে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মনে হচ্ছিল রজনীজাদু যেন হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ‘জেলার’-এর পর ফের তিনি দর্শক এবং সমালোচকের হৃদয়ে রাজত্ব করলেন। এবার তিনি জুটি বেঁধেছেন দক্ষিণের আলোচিত নির্মাতা লোকেশ কঙ্গরাজের সঙ্গে, তাই ‘কুলি’-র প্রতি প্রত্যাশা ছিল উঁচু।
লোকেশ কঙ্গরাজ নতুন নির্মাতা নন। আট বছরের ক্যারিয়ার, ছয়টি ছবি কিন্তু বৈচিত্র্যের বদলে তাঁর ছবির ছন্দ দিন দিন পূর্বানুমানযোগ্য হয়ে উঠেছে। এক সময় ‘কাইথি’-এর গ্যাটলিং গান বা ‘লিও’-র প্রাণী ব্যবহার করে ক্লাইম্যাক্সে তাজা সাড়া পাওয়া যেত। কিন্তু ‘কুলি’-তে দেখা গেল, লোকেশিজম এখন ক্লান্তিকর হয়ে গেছে; বারবার নিজেকেই অনুকরণ করার চেষ্টা যেন চোখে পড়ে।
গল্প শুরু হয় দেবার (রজনীকান্ত) পুরনো বন্ধু রাজশেখর (সত্যরাজ) হত্যার রহস্য উদঘাটন দিয়ে। তার সঙ্গে সঙ্গী হন রাজশেখরের মেয়ে প্রীতি (শ্রুতি হাসান)। অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে তারা মুখোমুখি হন হিংস্র খলনায়ক দয়াল (সৌবিন শাহি) ও তার কর্তা সাইমন (নাগার্জুনা)-এর। কিন্তু দুর্বল চিত্রনাট্য এবং জটিল টুইস্টে প্লটের ধারাবাহিকতা হ্রাস পায়।
লোকেশ কঙ্গরাজ রজনীকান্তের মতো সুপারস্টারকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিক সিনেমা বানানোর চেষ্টা করেছেন, তবে ‘কুলি’-তে যেন একই সঙ্গে আরেকটি রজনীকান্ত ছবি এবং আরেকটি লোকেশ ছবি বানানোর মরিয়া প্রয়াস দেখা গেছে। তার ফল নতুনত্বের অভাব, জটিল সাবপ্লট, অসংলগ্ন চরিত্র। শ্রুতি হাসানের প্রীতি চরিত্রের প্রতিক্রিয়া এবং আবেগের যুক্তি দর্শকের কাছে বোঝা যায় না।
অভিনয় দিক থেকে রজনীকান্ত অবশ্য প্রশংসনীয়। ৭৪ বছর বয়সেও তিনি পর্দায় রাজত্ব করেন এক ভ্রুকুটি, হাসি, বা সিগারেট ঘোরানো মুহূর্তও দর্শকের মন দুলিয়ে দিতে যথেষ্ট। কিন্তু সিনেমার শেষের অপ্রাসঙ্গিক আমির খান-এর উপস্থিতি বিভ্রান্তিকর। গিরিশ গঙ্গাধরের ক্যামেরা এবং অনিরুদ্ধের ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ছবিতে কিছু প্রাণ যোগ করেছে, কিন্তু পুরো সিনেমা হিসেবে ‘কুলি’ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারলো না।
সারসংক্ষেপ: রজনীকান্তের জাদু এখনও অটুট, কিন্তু লোকেশ কঙ্গরাজের ক্লান্তিকর গল্প এবং অতিরিক্ত টুইস্টের কারণে ‘কুলি’ দর্শক প্রত্যাশার সমান মনে হয়