একসঙ্গে দুই 'জলি' হাজির, তবুও ফ্লপ? অক্ষয়-আরশাদের যুগলবন্দী কেন জমল না 'জলি এলএলবি ৩'-এ!

সাংবাদিক থেকে নির্মাতা, সুভাষ কাপুর বরাবরই সিরিয়াস রাজনীতিকে হাস্যরসের মোড়কে পর্দায় তুলে এনেছেন। তাঁর 'জলি' ফ্র্যাঞ্চাইজি তার প্রমাণ। বহুল আলোচিত 'জলি এলএলবি' এবং 'জলি এলএলবি ২'-এর পর এবার তিনি হাজির তৃতীয় কিস্তি 'জলি এলএলবি ৩' নিয়ে।
এবার কোর্টরুম ড্রামার আড়ালে ভারতের কৃষিসংকট ও কৃষকদের আত্মহত্যার মতো জরুরি সামাজিক বার্তা দিতে চেয়েছেন নির্মাতা। কিন্তু আগের কিস্তিগুলোর মতো এবার কি তিনি কঠিন রাজনৈতিক বার্তা ও কমেডির সঠিক সমন্বয় করতে পারলেন?

সিরিয়াস ম্যাসেজ, দুর্বল চিত্রনাট্য! 'জলি এলএলবি ৩' নির্মাতার সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিংকাজ ছিল, কারণ এবার তিনি সাহস করে সরাসরি ক্ষমতার কেন্দ্রে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু আফসোস! সমালোচকদের মতে, সিনেমা হিসেবে এটি এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সবচেয়ে দুর্বল কাজ! এই কিস্তিতে দুই 'জলি' আরশাদ ওয়ার্সি (জগদীশ ত্যাগী) এবং অক্ষয় কুমার (জগদীশ্বর মিশ্র) একসঙ্গে হাজির হয়েছেন। কিন্তু দুর্বল চিত্রনাট্যের কারণে তাঁদের বহু প্রত্যাশিত যুগলবন্দী আর মনে রাখার মতো হলো কই!

বদলে গেছেন বিচারক ত্রিপাঠি, একই আছেন জলিরা শুরুটা যদিও আশাজাগানিয়া ছিল। দিল্লির একই আদালতে কাজ করা দুই জলি, জগদীশ্বর (যিনি নিজেকে 'অরিজিনাল জলি' দাবি করেন) আর জগদীশ ত্যাগী ক্লায়েন্ট ছিনিয়ে নেন ও নিয়মিত ঝগড়া করেন। নির্মাতা পুরোনো কয়েকটি চরিত্র ফিরিয়ে এনেছেন, তাঁদের দিনযাপনও আছে আগের মতোই।
জগদীশ্বরের স্ত্রী পুষ্পা (হুমা কুরেশি) আগের মতোই সুরা আসক্ত। তবে বিচারক সুন্দরলাল ত্রিপাঠি (সৌরভ শুক্লা) এবার একেবারে বদলে গেছেন! তিনি এখন ফিটনেস প্রেমিক। নিয়মিত জিম করেন, প্রোটিন শেক নেন এবং ডেটিং অ্যাপেও নাম লেখাতে ভোলেননি!

কৃষকদের জন্য দুই জলির 'একতা' গল্প জমে ওঠে যখন দুই জলি তাদের পুরোনো শত্রুতা ভুলে এক গুরুত্বপূর্ণ কেসের জন্য এক হন। তাঁরা জনাকি (সীমা বিশ্বাস) নামের এক নারীর পাশে দাঁড়ান, যার কৃষক স্বামী আত্মহত্যা করেছেন। গল্পটি ২০১১ সালে উত্তর প্রদেশে সরকারের জমি অধিগ্রহণ নীতির বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলনের ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত।
এই কিস্তিতে দুই জলিকে লড়তে হয় বিলিয়নিয়ার হরি ভাই খৈতানের বিরুদ্ধে। ক্ষমতাশালী এই ব্যবসায়ী কৃষকদের উচ্ছেদ করে বিভিন্ন রাজ্যে নিজের প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করছেন। প্রশ্ন হলো, এমন হেভিওয়েট প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কি পেরে উঠবে দুই জলি?

অভিনয়ের বাজিমাত, কিন্তু রসায়নের অভাব বিলিয়নিয়ার হরিভাই খৈতানের চরিত্রে গজরাজ রাও দারুণ। তাঁর টাক মাথার লুক, ক্রুর চাউনি আর শয়তানির হাসি ছবিতে উত্তেজনা ধরে রাখে। অন্যদিকে, সৌরভ শুক্লাও নিজের চরিত্রে যথাযথ। স্রেফ লাজুক হাসিতেই মাত করতে পারেন তিনি!
তবে হতাশ করেছে দুই জলির কমেডি রসায়ন। দুটি প্রধান চরিত্রের অভিনেতাদের কমেডি দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও 'জলি এলএলবি ৩' সেই চিত্তাকর্ষক কমেডি হয়ে উঠতে পারেনি। দুজনের রসায়ন সেভাবে জমেনি।

সমালোচকরা মনে করছেন, ছবির সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্তগুলো দেওয়া হয়েছে অক্ষয় কুমারকে, সম্ভবত তিনি বড় তারকা বলেই। একেবারেই শেষে আরশাদ ওয়ার্সিকে ফেরানোটা যেন 'সান্ত্বনা পুরস্কারের' মতো মনে হয়েছে। নির্মাতা কমেডি আর সামাজিক বার্তার সঠিক সমন্বয় করতে হিমশিম খেয়েছেন। একটি দৃশ্যে অক্ষয় কুমার যখন আদালতকে অনুরোধ করেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কৃষি বিষয়ে শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে এমন সংলাপ হাসায়, তেমনই ভাবায়ও। কিন্তু মুশকিল হলো, এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত সিনেমায় আসে বিচ্ছিন্নভাবে; তাই 'জলি এলএলবি ৩' এই ফ্র্যাঞ্চাইজির নামের সঙ্গে সুবিচার করতে পারল না।