প্রযোজনা সংস্থা জংলি পিকচারস, যারা 'রাজি' ও 'তলওয়ার'-এর মতো সফল সিনেমা উপহার দিয়েছে, এবার নিয়ে এসেছে এক গভীর সামাজিক ও আদালতকেন্দ্রিক ড্রামা ‘হক’। ভারতের ইতিহাসে আলোড়ন সৃষ্টিকারী শাহ বানু মামলা থেকে অনুপ্রাণিত এই সিনেমাটি ন্যায়বিচার, ধর্মীয় অনুশাসনের ব্যাখ্যা এবং নারীর আত্মমর্যাদার সংগ্রামকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। 'হক'-এর গল্প সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটিকে তুলে ধরে, যখন ১৯৮৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায় ধর্মনিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত ধর্মীয় আইনের মধ্যে নতুন সংলাপ সৃষ্টি করেছিল। সিনেমাটি প্রশ্ন তোলে একজন নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচারের অধিকার সর্বোচ্চ, নাকি ধর্মের ব্যাখ্যা আইনের ঊর্ধ্বে? দক্ষিণ ভারতের নির্মাতা সুপারন এস. বর্মা পরিচালিত এই ছবিটি ভারতীয় সমাজ ও আইনব্যবস্থার গভীরে পৌঁছে দেয় এক মানবিক বার্তা।

এই সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্র সাজিয়া বানুর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ইয়ামি গৌতম, যিনি সমাজের প্রথাগত বেড়াজাল ভেঙে নিজের ও সন্তানের অধিকার আদায়ের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হন। সাজিয়ার স্বামী আইনজীবী আব্বাস চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমরান হাশমি। রোমান্টিক ঘরানার ইমেজ ছেড়ে ইমরান এখানে সম্পূর্ণ ভিন্ন ও দৃঢ় অবতারে আবির্ভূত হয়েছেন। ইয়ামি ও ইমরানের এই প্রথমবারের মতো জুটি বাঁধা, তাঁদের রসায়ন ও আদালত কক্ষের তীব্র বিতর্কগুলো ‘হক’কে এক আবেগঘন ও মননশীল অভিজ্ঞতা দিয়েছে। ছবির ট্রেলারে দেখা যায়, সাজিয়ার এই মামলা কেবল ব্যক্তিগত ভরণপোষণের লড়াই নয়, এটি এক জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন ন্যায় কি কেবল পুরুষের সংজ্ঞায় সীমাবদ্ধ থাকবে? ট্রেলারের সংলাপ, "যখন একজন নারী তাঁর অধিকারের জন্য লড়াই শুরু করেন, তখন তাঁর কণ্ঠ একা থাকে না," সিনেমার মূল বার্তা বহন করে।

তবে ছবির মুক্তির আগে বিতর্কও দানা বেঁধেছে। সম্প্রতি শাহ বানুর পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন করা হয়েছে ছবিটির মুক্তি স্থগিত করার জন্য, তাদের দাবি এটি মুসলিম সমাজের ভাবাবেগে আঘাত করতে পারে। যদিও সেন্সর বোর্ড কোনো দৃশ্য বা সংলাপে কাটছাঁট করেনি। বিচারপতি, আইনজীবী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আয়োজিত বিশেষ প্রদর্শনীতে ছবিটি ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। 'কওম' না 'আইন?' এই মৌলিক প্রশ্নটিই হলো ‘হক’ সিনেমার হৃদয়। ধর্মীয় প্রথা, সামাজিক অবস্থান নাকি সংবিধান কার কর্তৃত্ব সর্বোচ্চ হবে? আগামীকাল মুক্তি পেতে চলা এই চলচ্চিত্রটি কেবল বিনোদন নয়, এটি দর্শকদের চিন্তা, বিতর্ক ও আত্মসমালোচনার সুযোগ এনে দেবে এবং হয়তো অনেক নিস্তব্ধ কণ্ঠকে নিজের 'হক'-এর জন্য দাঁড়ানোর সাহস যোগাবে।