বহু বছর পেরিয়ে গেলেও বলিউডের 'ড্রিম গার্ল' হেমা মালিনী এবং 'হি-ম্যান' ধর্মেন্দ্র-র প্রেমকাহিনী আজও আলোচনার কেন্দ্রে। সম্প্রতি ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর পর তাঁদের প্রেম নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে। প্রেম, পর্দার কাজ এবং অবশেষে সব বাধা পেরিয়ে বিয়ে,তাঁদের জীবন যেন রূপালি পর্দার মতোই নাটকীয়।
দ্য ড্রিম গার্ল’-এ তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। রাজ কাপুরের একটি ছবির কাজ শেষে যখন তিনি প্রথম স্টেজে ডাক পান, ধর্মেন্দ্র তখন শশী কাপুরের সঙ্গে পাঞ্জাবি ভাষায় বলছিলেন, "মেয়েটি খুব সুন্দর"। হেমা সেই মন্তব্য উপেক্ষা করলেও, ১৯৭০ সালে 'তুম হাসিন ম্যায় জওয়ান' সিনেমার সেটে তাঁদের মধ্যে প্রেম শুরু হয়। মজার বিষয় হলো, সেই সময় ধর্মেন্দ্র ছিলেন বিবাহিত এবং সানি ও ববি দেওলের বাবা।
এক সাক্ষাৎকারে হেমা স্বীকার করেন, "ধর্মেন্দ্রকে প্রথম দেখার মুহূর্তে আমি বুঝে গিয়েছিলাম আমার জীবনের জন্য এমন মানুষই চাই।" এই মুহূর্তের উপলব্ধিই জন্ম দেয় বলিউডের অন্যতম আলোচিত প্রেমকাহিনীর।
ধর্মেন্দ্র ও হেমা মালিনী একসঙ্গে ৪২টি সিনেমায় কাজ করেছেন, যার মধ্যে 'শোলে', 'সীতা অউর গীতা', এবং 'নসীব'-এর মতো সুপারহিট ছবি রয়েছে। তাঁদের পর্দার রোম্যান্স যখন তুঙ্গে, তখনই তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বলিউডে সবচেয়ে বেশি চর্চিত হতে শুরু করে।
তবে, এই সম্পর্কের মাঝেই একসময় ধর্মেন্দ্র অন্য অভিনেত্রী অনীতা রাজের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন। তাঁদের পেশাদারি সম্পর্ক ব্যক্তিগত দিকে মোড় নিতে শুরু করলে তা ধর্মেন্দ্রর দাম্পত্য জীবনেও প্রভাব ফেলে। খবরটি হেমা মালিনীর কানে পৌঁছালে তিনি ধর্মেন্দ্রকে সতর্ক করেন। ধর্মেন্দ্র সেই সতর্কবার্তা বুঝতে পেরে অনীতার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেন এবং সময়ের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়।
হেমা ও ধর্মেন্দ্রর প্রেম চলেছিল প্রায় পাঁচ বছর ধরে। এই বিয়েতে হেমার বাবার আপত্তি ছিল। অবশেষে ১৯৭৯ সালে তাঁরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তবে বিপত্তি আসে ধর্মেন্দ্রর প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌর-এর দিক থেকে। প্রকাশ বিচ্ছেদে রাজি ছিলেন না। তাই হিন্দু বিবাহ আইন অনুযায়ী বৈধভাবে বিয়ে করা সম্ভব ছিল না।
অদম্য ধর্মেন্দ্র তখন এক সাহসী সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হেমাকে বিয়ে করেন। ধর্ম পরিবর্তনের পর ধর্মেন্দ্রর নাম হয় দিলাওয়ার খান এবং হেমার নাম হয় আইশা বি আর চক্রবর্তী। মাত্র দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে হয় তাঁদের গোপন বিয়ে। পরে হেমার পারিবারিক রীতি অনুযায়ী একটি আইয়েঙ্গার স্টাইলের প্রথাগত বিয়ের অনুষ্ঠানও করা হয়। তাঁদের দুই মেয়ে এশা দেওল (১৯৮১) এবং আহানা দেওল (১৯৮৫)।
ধর্মেন্দ্রর প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌর ১৯৮১ সালে স্টারডাস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ধর্মেন্দ্রকে নারী প্রেমিক বলার তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, "কেবল আমার স্বামী কেন? যেকোনো পুরুষই হেমাকে পছন্দ করতেন। তিনি হয়তো সেরা স্বামী নন, তবে নিঃসন্দেহে সেরা পিতা।"
প্রকাশ কৌর কখনো হেমাকে দোষারোপ করেননি। বরং তিনি বুঝতে পারেন হেমার অনুভূতি। তবে তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, নিজে হেমার জায়গায় থাকলে তিনি এমন কাজ করতেন না। তিনি বলেন, "আমি বুঝতে পারি হেমার অনুভূতি। কিন্তু আমি যদি হেমার জায়গায় থাকতাম, আমি হেমার মতো কাজ করতাম না। একজন স্ত্রী ও মা হিসেবে আমি এটা করতে পারি না।"