২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া সিরিজের দ্বিতীয় ছবি ‘দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ প্রমাণ করে দিয়েছিল, করোনা-পরবর্তী সময়েও বড় পর্দার জাদু ফুরোয়নি। দ্য হলিউড রিপোর্টারের তথ্য অনুযায়ী, সিনেমাটি বিশ্বজুড়ে আয় করে প্রায় ২.৩ বিলিয়ন ডলার। আয়ের অঙ্ক ছাড়াও, বিশাল ক্যানভাস আর চোখ ধাঁধানো ভিজ্যুয়াল দর্শকদের এমন এক বিস্ময়ের ঘোরে ডুবিয়েছিল, যা সহজে কাটার নয়। আর সেই ঘোর ফের জাগাতে ফিরছে ‘অ্যাভাটার’।

সম্প্রতি লন্ডনে অনুষ্ঠিত বিশেষ প্রদর্শনীতে যেন সত্যিই বইল ‘পানডোরা ঝড়’। প্রদর্শনী শেষে সমালোচকদের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট জেমস ক্যামেরন আবারও তার ভিজ্যুয়াল ম্যাজিক দেখিয়েছেন। সমালোচক কোর্টনি হাওয়ার্ড লিখেছেন, ‘অ্যাভাটার ৩ মনে করিয়ে দেয় কেন সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা জরুরি।’ কলাইডারের পেরি নেমিরফের কথায়, ‘পানডোরায় ফিরে যাওয়ার অনুভূতি হয়েছে, নীল আলোয় মোড়া সেই জগত যেন আবার ডাকছে।’

ডিসেম্বরে বিশ্বব্যাপী মুক্তি পেতে চলেছে সিরিজের তৃতীয় কিস্তি ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’। বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বাড়তি আনন্দ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে একই দিনে স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পাবে ছবিটি।

এই পর্বের কেন্দ্রেও সুলি পরিবার। আগের কিস্তিতে নেটেয়ামের মৃত্যু তাদের জীবনে যে ক্ষত তৈরি করেছে, তার রেশ এখনো কাটেনি। শোক আর টিকে থাকার লড়াইয়ের মাঝেই হাজির হয় নতুন হুমকি। প্রথমবারের মতো দর্শক পরিচিত হবে ‘আগুন উপজাতি’র সঙ্গে, যাদের উপস্থিতি গল্পে এনে দেবে নতুন উত্তেজনা। মাইকেল লির ভাষায়, ‘এই সিনেমার ভিজ্যুয়াল অ্যাকশন পৌঁছে গেছে একেবারে নতুন উচ্চতায়।’ সেই উচ্চতায় পৌঁছাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন স্যাম ওয়ার্থিংটন, জো সালদানা, সিগরনি উইভার, স্টিফেন ল্যাং এবং কেট উইন্সলেট।

গত ৫ ডিসেম্বর প্যারিসে সংবাদ সম্মেলনে ক্যামেরন জানান, এবার দর্শক দেখবেন সন্তানদের বড় হয়ে ওঠা এবং নিজেদের পরিচয় খোঁজার গল্প। তাদের মা পুরোপুরি নাভি, আর বাবা ভিন গ্রহের মানুষ এই দ্বৈত পরিচয় তাদের জীবনে যেমন আনন্দ আনে, তেমনি নিয়ে আসে কঠিন চ্যালেঞ্জ।

৭১ বছর বয়সী এই কানাডিয়ান নির্মাতা আরও বলেন, ছবিটিতে তিনি শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত অভিবাসী পরিবারের বাস্তবতাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন যেন দর্শক সহজেই নিজের জীবনের সঙ্গে সংযোগ খুঁজে পান।

‘অ্যাভাটার’ মানেই প্রযুক্তিগত বিস্ময় সিনেমাটোগ্রাফি, অ্যানিমেশন, কারিগরি সবখানেই নতুনত্ব। তবে সংগীতের ক্ষেত্রেও যে একই মাত্রার পরিশ্রম হয়, তা অনেকেই জানেন না। সুরকার সাইমন ফ্র্যাংলেন জানিয়েছেন, এই ছবির সংগীত শেষ করতে তার সময় লেগেছে টানা সাত বছর। তিনি লিখেছেন ১,৯০৭ পাতার অর্কেস্ট্রা স্কোর, এমনকি পানডোরার বাসিন্দাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন বাদ্যযন্ত্রও তৈরি করেছেন।

জেমস ক্যামেরনের কথায়, এই ছবির বক্স অফিস ফলই ঠিক করবে ‘অ্যাভাটার’ সিরিজের ভবিষ্যৎ। প্রথম ‘অ্যাভাটার’ এখনও বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা। দ্বিতীয় কিস্তি সফল হলেও সেই রেকর্ড ছুঁতে পারেনি। তাই তরুণ থেকে প্রবীণ সবার দৃষ্টি এখন ১৯ ডিসেম্বরের দিকে। প্রশ্ন একটাই, ক্যামেরন কি আবারও বক্স অফিসে বাজিমাত করতে পারবেন?