চলচ্চিত্রটি পাঁচটি দেশের অনুদানে এগিয়ে গেছে। সেই অর্থেই শেষ হয়েছে পুরো শুটিং, আর এখন চলছে পোস্ট-প্রোডাকশন। কাজ শেষ না হলেও প্রচারের গতি কমছে না। তার পরের ধাপেই এশিয়া থেকে একমাত্র প্রকল্প হিসেবে জায়গা পেয়েছে ফ্রান্সের Les Arcs Film Festival–এর Work in Progress অংশে। উৎসব শুরু হচ্ছে ১৩ ডিসেম্বর, আর সেখানে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে রুবাইয়াত হোসেনের নতুন সিনেমা The Difficult Bride।

কেন Les Arcs এত গুরুত্বপূর্ণ

অল্প সময়ে এই উৎসব বিশ্বের বড় বড় চলচ্চিত্র উৎসবের দিকে যাওয়ার এক ধরনের সিঁড়ি হয়ে উঠেছে। এখানকার Work in Progress এ যেসব প্রকল্প থাকে, সেগুলোর অনেকই পরে কান, ভেনিস, লোকার্নো বা রটারডামের মূল প্রতিযোগিতায় দেখা যায়। Sound of Falling কানে জুরি পুরস্কার পেয়েছিল, Strange River জায়গা করে নিয়েছিল ভেনিসে।

রুবাইয়াত হোসেন বললেন, এই অংশে থাকে আন্তর্জাতিক সব বড় বিক্রয়-এজেন্ট। তাদের সামনে সিনেমা উপস্থাপনের সুযোগ মিললে ভবিষ্যতে বৈশ্বিক প্রদর্শনের পথ খুলে যায়। আর প্রযোজকদের এক বড় সমাবেশও হয় সেখানে। “এবার এশিয়া থেকে আমরাই একমাত্র। অভিজ্ঞতা কেমন হয়, সেটা দেখাই লক্ষ্য। বাংলা ভাষার সিনেমাকে আরও দূরে নিতে চাই,” তার ভাষা।

শুটিংটা হলো গোপনে

এই ছবিতে আছেন তিন জাতীয় পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী, আজমেরী হক বাঁধন, সুনেরাহ বিনতে কামাল আর রিকিতা নন্দিনী শিমু। এই তিনজনকে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে দেখা যাবে। পুরো শুটিং হয়েছে প্রায় গোপনেই। বাঁধন বললেন, আপাতত সিনেমা নিয়ে মন্তব্য করতে চান না। একই অবস্থান সুনেরাহরও, পরিচালক অনুমতি দিলে তবেই বলবেন।

রুবাইয়াত জানান, মাঝামাঝি সময়ে দ্রুত শুটিং শেষ করেছেন, তাই আগে কাউকে কিছু জানানো হয়নি। তিন অভিনেত্রীর কাজ নিয়ে তিনি বেশ সন্তুষ্ট। চরিত্র নিয়ে আলোচনায় কেউই নিজের ভূমিকার আকার নিয়ে মাথা ঘামাননি; বরং গল্পটাই ছিল তাঁদের মূল ফোকাস।

প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন জাইনীন করিম। সহকারী পরিচালক থেকে অভিনেত্রী হওয়ার এই রূপান্তর বেশ সাহসী এক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন রুবাইয়াত। অভিনয়ের অভিজ্ঞতা না থাকলেও জাইনীন চরিত্রটিকে পুরোপুরি নিজের করে নিয়েছেন।

সিনেমার ভিতরকার গল্প

বিয়ে, মেকআপ আর একটা বিউটি পারলারের জগৎ ঘিরেই নির্মিত হয়েছে The Difficult Bride। সামাজিক নাটক হলেও এতে রয়েছে হররের ছোঁয়া। রুবাইয়াত আগেও সমাজ ও নারীর জীবনের গল্প বলেছেন Meherjaan, Under Construction, Made in Bangladesh–এ। এবার একই প্রবণতা নতুন ঘরানায়। নারীকে কেন্দ্র করে নিজের দায়বোধ থেকেই গল্পটি এসেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

দীর্ঘ অপেক্ষার ফল

এই প্রকল্প নিয়ে Variey ও খবর করেছে। সেখানে রুবাইয়াত বলেছেন, এই সিনেমা করতে তিনি অপেক্ষা করেছেন টানা ২১ বছর। ২০০৬-এ স্বল্পদৈর্ঘ্য বানানোর কথা ভাবলেও সেটা পরে স্থগিত হয়। সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে গল্প, আর সেই পুনর্লিখন চলেছে দুই দশক ধরে।

ফ্রান্স থেকে লিসবন

শুটিং শেষে এখন ফ্রান্সে চলছে এডিটিং। এরপরের ধাপগুলো হবে পর্তুগালের লিসবনে। পোস্ট-প্রোডাকশনে বড় ব্যয় ধরা হয়েছে, কারণ সিনেমাটিতে আছে ব্যাপক VFX কাজ। সবই হচ্ছে বিভিন্ন দেশের অনুদানের টাকায়। এরই মধ্যে প্রকল্পটি সহায়তা পেয়েছে German World Cinema Fund, Portuguese Film Institute, Eurimages–সহ বহু সংস্থা থেকে। পর্তুগাল, নরওয়ে, জার্মানি, ফ্রান্স আর বাংলাদেশ, এই পাঁচ দেশের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি হচ্ছে সিনেমাটি।

বাজেট নিয়ে পরিচালক কিছু বলতে চাননি, তবে দলের একটি সূত্র জানায় আন্তর্জাতিক মানের জন্য খরচ বেশ বড়। দেশের দর্শকদের ছবিটি দেখতে অপেক্ষা করতে হবে অনেকটা সময়। কারণ পোস্ট-প্রোডাকশন শেষ হওয়ার পর ছবিটি যাবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে। ওই যাত্রা শেষে তবেই দেশে মুক্তির সম্ভাবনা।

দ্য ডিফিকাল্ট ব্রাইড এ আরও অভিনয় করেছেন সাবেরী আলম, দামির খান ও মোহাম্মদ বারী।