মেজবাউর রহমান সুমনের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র রইদ নিয়ে সম্প্রতি ট্রেলার প্রকাশের পর ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। হাওয়ার সাফল্যের তিন বছর পর এই নির্মাতা একটি লোকজ আখ্যান নিয়ে ফিরছেন, যা ইতোমধ্যেই দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। শৈশবের স্মৃতি এবং মায়ের মুখে শোনা গল্পের অনুপ্রেরণা থেকে এই সিনেমার ভাবনা পেয়েছেন পরিচালক। রইদ মূলত সাদু, তার নামহীন পাগল স্ত্রী এবং একটি তালগাছকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এক মনস্তাত্ত্বিক আখ্যান। মেজবাউর রহমান সুমনের মতে, হাওয়া ছিল সমুদ্রের অনিশ্চয়তার গল্প, আর রইদ নির্মিত হয়েছে স্থলভাগের অনুভূতির বর্তমানে।
সিনেমাটির দৃশ্যপট ও লোকেশন বাস্তবসম্মত করতে নির্মাতা ফাঁকা জায়গায় প্রায় ৫০ হাজার গাছ লাগিয়েছিলেন এবং ছয় মাস ধরে সেগুলোর পরিচর্যা করেছেন। এমনকি গল্পের প্রধান বাড়িটিও শুটিংয়ের জন্য নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। লোকেশনকে কেবল প্রেক্ষাপট নয়, বরং গল্পের অংশ করে তুলতেই এমন পরিশ্রম করা হয়েছে। নির্মাণের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সিনেমাটিকে ভিজুয়ালি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
নাজিফা তুষি এই সিনেমায় সাদুর পাগল স্ত্রী চরিত্রে অভিনয় করেছেন। চরিত্রের প্রয়োজনে তিনি নিজেকে আমূল বদলে ফেলেছেন। তিনি টানা ছয় মাস চুলে শ্যাম্পু, সাবান বা কোনো মেকআপ ব্যবহার করেননি। গায়ে শর্ষের তেল মেখে রোদে দাঁড়িয়ে ত্বক পুড়িয়েছেন যাতে শরীরে রোদে পোড়া দাগ ও মেছতা ফুটে ওঠে। এছাড়াও দাঁতের গঠন ও রঙে পরিবর্তন এনেছেন এবং কথা বলার ধরন বদলাতে পাথরের চুন খেয়েছেন, যার ফলে তাঁর জিব ও মুখ পুড়ে যেত। বাস্তব জীবনের কাছাকাছি থাকতে তিনি শ্রমিকদের সাথে কাজ করেছেন এবং সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত পুরোনো কাপড় পরে শুটিং করেছেন।
সিনেমাটি মুক্তির আগেই বড় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। নেদারল্যান্ডসের মর্যাদাপূর্ণ রটারড্যাম চলচ্চিত্র উৎসবের ৫৫তম আসরের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগ টাইগার কম্পিটিশনে এটি অফিশিয়ালি নির্বাচিত হয়েছে। মোস্তাফিজুর নূর ইমরান ও নাজিফা তুষি অভিনীত এই সিনেমাটি বাংলাদেশের সমসাময়িক চলচ্চিত্রে এক নতুন মাইলফলক হতে চলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।