লালনসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীন আর নেই। শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। দীর্ঘদিন ধরে কিডনির জটিলতায় ভুগলেও গানের প্রতি তাঁর ভালোবাসা কখনো থেমে থাকেনি। ডায়ালাইসিস কিংবা ভেন্টিলেশন সব চেষ্টা ব্যর্থ করে অবশেষে নিভে গেল বাংলার গানের আকাশের উজ্জ্বল এক নক্ষত্র।
তবে তাঁর মৃত্যু ঘিরে দাফনের স্থান নিয়ে পরিবারের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়। স্বামী বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিমের ইচ্ছা ছিল, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শ্রদ্ধা জানানোর পর ফরিদা পারভীনকে ঢাকার মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হবে। অন্যদিকে ছেলে এম আই নাহিল ও মেয়ে জিহান ফারিয়া জানিয়ে দেন, মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল কুষ্টিয়ার পৌর কবরস্থানে বাবা–মায়ের পাশে শায়িত হওয়ার। এ নিয়ে হাসপাতালের ভেতর দীর্ঘ আলোচনা চলে। অবশেষে শিল্পীর লিখিত অসিয়ত ও সন্তানদের অনুরোধে সিদ্ধান্ত হয় ঢাকায় সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে কুষ্টিয়াতেই হবে তাঁর চিরনিদ্রা।
শনিবার রাতেই মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ফরিদা পারভীনের তেজকুনীপাড়ার বাসায়। রোববার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয় তাঁর মরদেহ। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে দুপুরে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কুষ্টিয়ায়। বাদ মাগরিব পৌর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয় তাঁকে।
ব্যক্তিজীবনে ফরিদা পারভীন প্রথমে জনপ্রিয় গীতিকার ও সুরকার আবু জাফরের স্ত্রী ছিলেন। তাঁদের সংসারে এক মেয়ে ও তিন ছেলে। আবু জাফরের লেখা-সুর করা গানগুলোর মধ্যে ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’, ‘তোমরা ভুলে গেছো মল্লিকাদির নাম’ এবং ‘নিন্দার কাঁটা’ ফরিদা পারভীনের কণ্ঠে অমর হয়ে আছে। পরে দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদ হলেও গানই ছিল তাঁর একমাত্র সঙ্গী। ২০০৫ সালে তিনি বিয়ে করেন বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিমকে।
৭১ বছর বয়সী এই শিল্পীর কণ্ঠে লালনগীতি নতুন প্রাণ পেয়েছিল। তাঁর গানের মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লালনকে চিনেছে এবং ভালোবেসেছে। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নিভে গেল সেই কণ্ঠস্বর, তবে রেখে গেল চিরন্তন এক সুর, যা বাংলার সংগীত আকাশে জ্বলজ্বল করবে অনন্তকাল।