ঢাকাই সিনেমার অ্যাকশন কিং জসিম মানেই পর্দায় ধুন্ধুমার মারপিট। কিন্তু একবার হার্টের অপারেশনের মাত্র ২০ দিন পরই শুটিং সেটে ফিরে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন এই জনপ্রিয় নায়ক। প্রযোজক-পরিচালকরা যখন তাঁকে বিশ্রামে থাকতে বলছিলেন, তখন তিনি নিজেই ফিরলেন লাইট-ক্যামেরার সামনে! আর সেই প্রত্যাবর্তনের দৃশ্য ছিল সরাসরি মারপিটের ক্লাইম্যাক্স!
সেই সময়ের প্রধান খলনায়ক, অভিনেতা আহমেদ শরীফের সঙ্গে ছিল জসিমের সবচেয়ে বেশি দৃশ্য। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে সেই ঘটনার রোমাঞ্চকর স্মৃতিচারণ করেন আহমেদ শরীফ।
শরীরে বড় অস্ত্রোপচারের পর জসিমকে দেখে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তায় ছিলেন শরীফ। তাঁর মনে ভয় ছিল, যদি কোনোভাবে জসিমের আঘাত লেগে বড় ক্ষতি হয়ে যায়! জসিম অবশ্য নির্দ্বিধায় শরীফকে বলেছিলেন, "আপনি যেভাবে আমাকে ঘুষি দিতেন, সেভাবেই দেবেন।"
তবে, আহমেদ শরীফ ভয় কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না। মারপিটের দৃশ্য শুরু হতেই তিনি কিছুটা আলতোভাবে জসিমের পেটে একটি ঘুষি মারেন।
আহমেদ শরীফ ঘাবড়ে গেলেন। ভাবলেন,হয়তো আঘাতটা জোরে লেগেছে বা জসিম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু কাছে এসে জসিম যে কথা বললেন, তাতে শরীফ নিজেই চমকে গেলেন। জসিম সরাসরি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন:
"আজকে কি আপনার শুটিংয়ের মুড নাই? না থাকলে প্যাকআপ করে দিই।"
জসিমের কথায় জানা গেল, শরীফের সেই ঘুষি নাকি এতটাই আস্তে ছিল যে জসিমের কাছে মনে হয়েছে তাঁর গায়ে বাতাসও লাগেনি!
জসিম ছিলেন কাজপাগল। তিনি কোনো ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না। আহমেদ শরীফকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন, তিনি যেন তাঁর অপারেশনের কথা ভুলে যান এবং আগের মতো জোরে ঘুষি মারেন!
অবশেষে, জসিমের কথায় সাহস পেয়ে আহমেদ শরীফ যখন সিরিয়াস ফাইটিং শুরু করলেন এবং জোরে ঘুষি মারলেন, তখন জসিম খুশি হয়ে বললেন: "শ্বশুর, এখন ঠিক আছে!" (আহমেদ শরীফকে স্নেহ করে জসিম 'শ্বশুর' বলেই ডাকতেন)।
এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, কাজে কতটা নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন জসিম। তিনি খলনায়ক থেকে নায়ক হয়েছিলেন, আর আহমেদ শরীফ নায়ক হয়েও পরে খলচরিত্রে জনপ্রিয়তা পান। তাঁদের এই দারুণ বোঝাপড়ার কারণেই তাদের জুটি দর্শকপ্রিয় ছিল।