আইনের ছাত্রছাত্রী নিলেশ (সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী) ও বিধি (তৃপ্তি দিমরি) একই কলেজে পড়লেও তাদের সামাজিক অবস্থান ভিন্ন—বিধি উচ্চ বর্ণের আর নিলেশ দলিত পরিবার থেকে উঠে আসা। তাদের বন্ধুত্ব একসময় প্রেমে গড়ায়, তবে এই প্রেমের পরিণতি নিয়ে নিলেশ প্রথম থেকেই দ্বিধান্বিত থাকে। এই প্রেমের কি শুভ পরিণয় হবে নাকি ‘ধড়ক’-এর প্রথম কিস্তির মতো বিয়োগান্ত পরিণতি মেনে নিতে হবে—এটাই ‘ধড়ক ২’ সিনেমার মূল আকর্ষণ। ছবিটি ১ আগস্ট প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর গত ২৬ সেপ্টেম্বর নেটফ্লিক্সে এসেছে।
মূল গল্প ও ব্যতিক্রমী রিমেক
পরিচালক শাজিয়া ইকবালের এই সিনেমাটি ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া মারি সেলভারাজের আলোচিত তামিল সিনেমা ‘পারিয়েরাম পেরুমাল’-এর হিন্দি রিমেক। যদিও সাধারণত আলোচিত দক্ষিণি সিনেমার হিন্দি রিমেকগুলো বলিউডি মশলার কারণে প্রায়ই ব্যর্থ হয় (যেমন মারাঠি সিনেমা ‘সাইরাত’-এর হিন্দি রিমেক ‘ধড়ক’), তবে ‘ধড়ক ২’ উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। নির্মাতা শাজিয়া ইকবাল বলিউডি সিনেমা বানালেও মূল গল্পের সংবেদনশীল আত্মাকে বিসর্জন দেননি।
‘ধড়ক ২’ স্রেফ একটি রোমান্টিক সিনেমা নয়; এটি প্রেমের গল্পের মোড়কে ভারতের জাত বৈষম্য নিয়ে কড়া বার্তা দিতে চেয়েছে। মূল সিনেমা ‘পারিয়েরাম পেরুমাল’-এর নিম্নবর্গের যুবকের কলেজ বৈষম্যের মুখোমুখি হওয়ার সংগ্রামকে এখানে সংবেদনশীলভাবে দেখানো হয়েছে।
প্রেমে ফুটে উঠল জাতবৈষম্য
সিনেমায় দলিত ছাত্রনেতা নিলেশের চরিত্রের মাধ্যমে বৈষম্যের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে, বিধি চরিত্রটি মূল গল্পের তুলনায় অনেক বেশি মুক্তমনা, যে পরিবার ও সমাজের প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নিলেশের জীবনে জড়িয়ে যায়।
নিলেশ আর বিধির প্রথম দেখার দৃশ্যেই দুই পরিবারের আর্থিক ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে যায়—বিধি দেখে, নিলেশ তাদের বাড়ির এক অনুষ্ঠানে ড্রাম বাজাচ্ছে। তাদের কথোপকথনে জাতবৈষম্যের বাস্তবতা উঠে আসে। বিধি বলে, "আমি ভাবতাম জাতবৈষম্য কেবল গ্রাম পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।" নিলেশ এর উত্তরে বলে, "যা কখনো বৈষম্যের শিকার হয়নি, তাদের পক্ষেই কেবল এমন কথা বলা সম্ভব।"
অভিনয়ে সততা
‘ধড়ক ২’-এ নিলেশের সংগ্রাম, ক্রোধ ও সহানুভূতি অত্যন্ত সততা ও শক্তিশালীভাবে দেখানো হয়েছে। এই চরিত্রে সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী দারুণ করেছেন। সমাজের নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তার রাগ, ক্ষোভ ও প্রতিশোধপরায়ণতা খুবই বিশ্বাসযোগ্য। বাণিজ্যিকভাবে সফল সিনেমার নায়িকা তৃপ্তি দিমরিও তুলনামূলক জটিল চরিত্রে যথাযথ অভিনয় করেছেন। এছাড়া কলেজ প্রিন্সিপালের ভূমিকায় জাকির হুসেইন নজর কেড়েছেন, আর ভাড়াটে খুনির চরিত্রে সৌরভ সচদেবা তার ক্রুর চাউনি দিয়ে ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন।