নব্বই দশকের শেষের দিকে বলিউডে অক্ষয় কুমার ও শিল্পা শেঠির প্রেমিক জীবন ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তখনকার পত্রিকা ও বিনোদন ম্যাগাজিনের পাতায় প্রায়শই তাদের সম্পর্ক নিয়ে নানা রোমাঞ্চকর কাহিনি প্রকাশিত হত। ‘ধাড়কান’ ছবির শুটিং-এর সময় থেকেই তাদের সম্পর্ক গড়তে শুরু করলেও, হঠাৎ করেই সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। এই ভাঙনের খবরে সিনেমার পরিচালক ধর্মেশ দর্শনও চিন্তিত ছিলেন, কারণ ভাবেছিলেন, এটা সিনেমার ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, ‘ধাড়কান’ বক্স অফিসে বড় সাফল্য অর্জন করে। ২০০০ সালের ১১ আগস্ট মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা ফিরে দেখছি শিল্পা ও অক্ষয়ের বাস্তব প্রেমকাহিনি।
অক্ষয় ও শিল্পার সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল ‘ম্যায় খিলাড়ি তু আনারি’ ছবির শুটিং-এর সময়। তাদের প্রেম প্রকাশ্যে ছিল স্পষ্ট-অনুষ্ঠান, পার্টি, রেড কার্পেটে তারা প্রায়শই একসঙ্গে দেখা যেত। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই সম্পর্ক ভেঙে যায়, যখন শিল্পা জানতে পারেন অক্ষয় একই সময়ে অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখছেন,তিনি ছিলেন বলিউডের আরেক জনপ্রিয় নায়িকা টুইঙ্কেল খান্না।
২০০০ সালে এক সাক্ষাৎকারে শিল্পা খোলাখুলি জানান, “ভাবতেই পারিনি, সে আমাদের পুরো সম্পর্ক চলাকালীন আমাকে প্রতারণা করবে। অন্য নারীর দোষ নয়, পুরো দোষটা ওর। আমার নিজের মানুষই আমাকে ধোঁকা দিয়েছে।”
সেই সাক্ষাৎকারে শিল্পা আরও বলেছিলেন, “অক্ষয় আমাকে ব্যবহার করেছে, তারপর সুবিধামতো ফেলে দিয়েছে, যখন সে টুইঙ্কেলের প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। একমাত্র ওর ওপর আমার রাগ ছিল। আমি নিশ্চিত, একদিন সে তার কর্মকাণ্ডের ফল পাবে। অতীত ভুলে যাওয়া সহজ নয়, তবে আমি খুশি যে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পেয়েছি। এখন সে আমার জীবনের একটি বিস্মৃত অধ্যায় মাত্র। আমি আর কখনো তার সঙ্গে কাজ করব না।”
এ সময় ‘ধাড়কান’ ছবির শুটিং চলছিল। ব্যক্তিগত জীবনে ধাক্কা লাগলেও শিল্পা পেশাদারিত্ব বজায় রেখে ছবির কাজ দ্রুত শেষ করতে চেয়েছিলেন, যাতে তার ব্যক্তিগত সমস্যা প্রযোজক বা ছবির কাজে প্রভাব ফেলে না।
শিল্পার অভিযোগের জবাবে অক্ষয় কুমার এসব কিছুই অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “শিল্পার উচিত নয় এই বিষয় নিয়ে ‘স্ক্যান্ডাল’ তৈরি করা।” তখন শিল্পার সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া ছিল, “ও যা করেছে, তারপর আর কী বলব?”
অক্ষয় ও টুইঙ্কেলের প্রথম দেখা হয়েছিল একটি ফিল্মফেয়ার ফটোশুটে। তবে তাদের প্রেমের সূত্রপাত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল খিলাড়ি’ ছবির শুটিং চলাকালীন সময়। টুইঙ্কেল তখন একটি ব্যর্থ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসে অক্ষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন। এরপর তাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে বিয়েতে পরিণত হয়।
২০০০ সালের ১১ আগস্ট মুক্তিপ্রাপ্ত ধর্মেশ দর্শনের ‘ধাড়কান’ ছিল একটি মিউজিক্যাল রোমান্টিক ড্রামা। ছবিতে অভিনয় করেন অক্ষয় কুমার, সুনীল শেঠি, শিল্পা শেঠি ও মহিমা চৌধুরী। সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ানো এই সিনেমাটি বক্স অফিসে দারুণ ব্যবসা করে, মাত্র ৯ কোটি রুপি বাজেটে তৈরি এই ছবিটি প্রায় ২৭ কোটি রুপি আয় করে। ছবির গানগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
অনেকের অজানা, ২০০১ সালে ‘ধাড়কান’ অবলম্বনে বাংলাদেশে ‘হৃদয়ের বন্ধন’ নামে একটি সিনেমা তৈরি হয়। এই ছবিটি পরিচালনা করেন এফ আই মানিক, যেখানে অভিনয় করেন আমিন খান, শাবনূর, রিয়াজ ও কেয়া। যদিও এটি ছিল অনানুষ্ঠানিক রিমেক।